কানাডা ভ্রমণ বা অভিবাসনের স্বপ্ন অনেক বাংলাদেশির মনে রয়েছে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হয় দক্ষ এজেন্সি বা ভিসা প্রসেসিং এজেন্টের সাহায্য। বাংলাদেশে বেশ কিছু এজেন্সি রয়েছে যারা কানাডায় যাওয়ার জন্য ভিসা প্রসেসিং থেকে শুরু করে চাকরি খোঁজার সুযোগ তৈরি করে দেয়।
তবে অনেকেই অপরিচিত এজেন্সি ও দালালদের মাধ্যমে কানাডা যেতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন। তাই সঠিক এজেন্সি নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নিচে বাংলাদেশের কয়েকটি বিশ্বস্ত কানাডার ভিসা প্রসেসিং এজেন্সি এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কানাডা যাওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য ভিসা এজেন্সিগুলোর নাম:
১. ওয়েস্টফোর্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস
অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মীদের সমন্বয়ে এই এজেন্সি কানাডা যাওয়ার জন্য ওয়ার্ক পারমিট, স্টুডেন্ট ভিসা এবং ইমিগ্রেশন প্রসেসিং সেবা প্রদান করে।
ঠিকানা: হাউস নং ১৫, রোড নং ৭, ঢাকা ১২১২।
২. স্টাডি ইন কানাডা এডমিশন সেন্টার
কানাডায় পড়াশোনার সুযোগ তৈরি করার জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রসেসিং, অফার লেটার সংগ্রহ, এবং ইউনিভার্সিটি অ্যাপ্লিকেশনে সহায়তা করে।
ঠিকানা: ৯৯, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, লেভেল-১৩, করিমন বাজার, ঢাকা ১২১৫।
৩. লেগাটো ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ভিসা কনসালট্যান্টস (LIVC)
কানাডায় অভিবাসন এবং চাকরির জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি নির্ভরযোগ্য। ওয়ার্ক পারমিট থেকে শুরু করে পিআর প্রসেসিং পর্যন্ত সব ধরনের সেবা এখানে পাওয়া যায়।
ঠিকানা: এম অ্যান্ড এম কমপ্লেক্স, ৭ম তলা, ২/১১, পল্লবী, মিরপুর-১২, ঢাকা-১২১৬।
৪. ভিএফএস গ্লোবাল (VFS Global)
ভিএফএস গ্লোবাল একটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ভিসা প্রসেসিং সেন্টার। কানাডা ভিসার আবেদন জমা দেওয়া থেকে শুরু করে বায়োমেট্রিক্স সংগ্রহের ব্যবস্থা করে থাকে। এটি কানাডা ভিসার জন্য সরকার অনুমোদিত ভিসা প্রসেসিং সেন্টার।
ঠিকানা: ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটের বিভিন্ন স্থানে তাদের অফিস রয়েছে।
৫. এস এ অ্যাসোসিয়েটস (SA Associates)
SA Associates শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা এবং ইমিগ্রেশন সেবা প্রদান করে।
ঠিকানা: স্যুইট # 501, AUGMEDIX বিল্ডিং, ১৭/সি পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫।
৬. অবকাশ
অবকাশ কানাডার ভ্রমণ এবং কাজের ভিসার জন্য জনপ্রিয় এজেন্সি।
ঠিকানা: ১১৬ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, ঢাকা।
৭. কুইবেক ইন্টারন্যাশনাল
এই অলাভজনক সংস্থা কানাডার কুইবেক প্রদেশে চাকরির সুযোগ তৈরি করে। যারা কুইবেক প্রদেশে কাজ করতে চান, তাদের জন্য এই এজেন্সি উপযোগী। সেখান থেকে চাকরির অফার লেটার নিয়ে কানাডার ভিসার জন্য আবেদন করা যায়।
৮. সিনার্জি হান্ট (SYNERGIE Hunt)
এই সংস্থা আন্তর্জাতিক কর্মী নিয়োগে অভিজ্ঞ। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এই এজেন্সি আন্তর্জাতিক কর্মীদের জন্য বিশেষজ্ঞ। তাদের মাধ্যমে কানাডাতে চাকরির অফার লেটার নিয়ে কানাডার ভিসার জন্য আবেদন করা যায়।
৯. ফিনিক্স-জিএমআই
ফিনিক্স-জিএমআই বিশেষ করে কারিগরি পেশার জন্য কাজ করে। কারিগরি কাজে দক্ষ হয়ে এখন থেকে চাকরি পাওয়া যায়। এবং সেই চাকরির অফার লেটার নিয়ে কানাডার ভিসার জন্য আবেদন করে কানাডাতে আসা যায়।
১০. অওরে (AURAY)
কানাডায় বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের জন্য মেধাবী কর্মী নিয়োগ এবং ভিসা প্রসেসিং সেবা প্রদান করে। তারা কানাডায় চাকরির সুযোগ এবং ওয়ার্ক পারমিট পেতে তাদের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহায়তা প্রদান করে।
কানাডা ভিসা প্রসেসিং এজেন্ট ইন বাংলাদেশ:
ভিসা প্রসেসিং এজেন্টরা আপনাকে ভিসা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া ও ধাপগুলিতে সহায়তা প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশে এমন অনেক এজেন্সি রয়েছে যারা কানাডা ভিসা প্রসেসিংয়ে সহায়তা করে। এই এজেন্সিগুলো আপনাকে ভিসা প্রসেসিং থেকে শুরু করে কানাডায় পৌঁছানো এবং কাজ বা শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা পর্যন্ত সব ধরনের সহায়তা প্রদান করে।
বাংলাদেশের উপরের সারির সকল ভিসা এজেন্সিই তাদের গ্রাহক সেবার পাশাপাশি ভিসা প্রসেসিং এজেন্ট সেবা প্রদান করে থাকে। উপরের উল্লেখিত ভিসা এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে আপনি কানাডার ভিসা আবেদন করার পাশাপাশি কানাডা ভিসা প্রসেসিং এজেন্ট সেবা নিতে পারেন।
সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায়
সরকারিভাবে কানাডায় যাওয়া তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ একটি পদ্ধতি। তবে এর জন্য আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হবে এবং প্রক্রিয়াটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ।
সরকারি উপায়ে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য IELTS স্কোর ন্যূনতম ৬ থাকতে হবে। এছাড়া ওয়ার্ক পারমিটের জন্য নির্ধারিত দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন।
BMET কার্যালয়ে আবেদন করতে হবে। নিকটস্থ বিএমইটি অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। BMET কার্যালয় বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে থাকে।
পরবর্তীতে কানাডিয়ান নিয়োগকর্তার কাছ থেকে কাজের প্রস্তাব পাওয়ার পর ভিসা আবেদন জমা দিতে হবে।
সরকারিভাবে কানাডা যেতে কত টাকা লাগে
সরকারিভাবে কানাডা যেতে সাধারণত ৬ লাখ থেকে ৯ লাখ টাকার মধ্যে সম্পূর্ণ প্রসেস সম্পন্ন হয়। সরকারি পদ্ধতিতে কানাডা যাওয়ার খরচ তুলনামূলক কম। এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়া তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল হতে পারে।
সরকারি মাধ্যমে কানাডা যাওয়ার খরচ বেসরকারি এজেন্সির খরচ থেকে ২ থেকে ৫ লক্ষ টাকা কম হয়ে থাকে।
সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার সুবিধা:
সরকারি পদ্ধতিতে কম খরচে কানাডা যাওয়া যায়। প্রতারণার ভয় থাকে না। তবে সরকারিভাবে কানাডা যাওয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেওয়া এবং সঠিক যোগ্যতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। তবে সরকারি তত্ত্বাবধানে কানাডাতে নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করে।
বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে কানাডা যাওয়া:
বেসরকারি এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে কানাডা যাওয়া দ্রুত এবং সহজ। তবে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অনেকেই প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। তাই নির্ভরযোগ্য এজেন্সি নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে কানাডা যাওয়ার সুবিধা:
দ্রুত প্রসেসিং: তারা দ্রুততার সাথে ভিসা প্রসেস করতে সক্ষম।
বিভিন্ন সেবা প্রদান: চাকরি, শিক্ষার সুযোগ এবং বসবাসের ব্যবস্থাপনা সহ প্রতিটি ধাপে তারা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে থাকে।
পরামর্শ সেবা: আবেদন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ভিসা সংক্রান্ত প্রতিটি ধাপে সুপরামর্শ দিয়ে সহায়তা প্রদান করে।
বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে কানাডা যাওয়ার অসুবিধা:
অত্যন্ত ব্যয়বহুল: অতিরিক্ত চার্জ এবং গোপন খরচ থাকে।
প্রতারক চক্র: কিছু এজেন্সি ভুয়া হতে পারে। এতে আপনি তাদের ফাঁদে পা দিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
কানাডায় কর্মসংস্থান সংস্থা
কানাডায় কিছু বিশ্বস্ত কর্মসংস্থান সংস্থা রয়েছে যারা আন্তর্জাতিক কর্মীদের নিয়োগে সহায়তা করে। এসব কর্মসংস্থান সংস্থা থেকে চাকরি খুঁজে কোনো এজেন্সির সহায়তা ছাড়াই কানাডাতে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়।
এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের চাকরির অফার লেটার নিয়ে কানাডার ভিসার জন্য আবেদন করে সহজেই নামমাত্র খরচে বা প্রায় বিনামূল্যেই কানাডায় যাওয়া যায়। কারণ অনেক কোম্পানি কানাডার ভিসার পাশাপাশি আবাসন ও প্লেনের টিকিটের খরচও প্রদান করে থাকে।
আরো পড়ুন
- কানাডা যাওয়ার যোগ্যতা সমূহ।
- কানাডা যেতে IELTS কত পয়েন্ট লাগে।
কানাডার শীর্ষ কর্মসংস্থান সংস্থাগুলো হলো:
১. Solution Recrutement International Inc: বিনামূল্যে চাকরি এবং ভিসা সেবা প্রদান করে।
২. Phoenix-GMI: এই প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের মাধ্যমে কানাডায় চাকরি খুঁজে পেতে সহায়তা করে।
৩. Synergie Hunt: ভার্চুয়াল জব ফেয়ার পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক কর্মীদের কানাডায় চাকরি পেতে সাহায্য করে।
৪. Auray: মেধাবী কর্মীদের জন্য মানসম্মত চাকরি পেতে সহায়তা করে।
সর্বশেষ কিছু কথা:
কানাডা যাওয়ার প্রক্রিয়া জটিল হতে পারে, তবে সঠিক তথ্য এবং বিশ্বস্ত এজেন্সির সাহায্যে এটি সহজ হয়ে ওঠে। সরকারিভাবে যাওয়া নিরাপদ, কিন্তু সময়সাপেক্ষ। অন্যদিকে, বেসরকারি এজেন্সি দ্রুততার সাথে সেবা প্রদান করলেও সতর্ক থাকতে হবে। তাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য এজেন্সি নির্বাচন করতে হবে। আশা করি এই নিবন্ধটি কানাডা যাওয়ার বিষয়ে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে।
আপনার যেকোনো প্রশ্ন থাকলে নিচের মন্তব্য বিভাগে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।