Home » কানাডা যেতে IELTS কত পয়েন্ট লাগে | স্টুডেন্ট ভিসার খরচ ও সুবিধা
কানাডা IELTS পয়েন্ট

কানাডা যেতে IELTS কত পয়েন্ট লাগে | স্টুডেন্ট ভিসার খরচ ও সুবিধা

কানাডা উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যতম গন্তব্য। কানাডার শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত এবং এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করে। কিন্তু, কানাডা যেতে হলে কিছু যোগ্যতা পূরণ করতে হয়, যার মধ্যে অন্যতম হলো IELTS স্কোর।

কানাডায় পড়াশোনা বা কাজের উদ্দেশ্যে যেতে IELTS পরীক্ষার স্কোর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডা যেতে ন্যূনতম ৬.৫ স্কোর প্রয়োজন। একইভাবে, কাজের ভিসার জন্য ৬ স্কোর গ্রহণযোগ্য। তবে, টুরিস্ট ভিসার ক্ষেত্রে IELTS-এর প্রয়োজন নেই।

মানসম্মত শিক্ষা, উন্নত জীবনযাত্রা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগের কারণেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গন্তব্য কানাডা।

কানাডা যেতে IELTS কত পয়েন্ট লাগে:

স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডা যেতে হলে সাধারণত ন্যূনতম ৬.৫ ব্যান্ড স্কোর প্রয়োজন হয়। তবে, পছন্দের বিষয় বা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে উচ্চতর স্কোরের প্রয়োজন হতে পারে। তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং কোর্সের ক্ষেত্রে ৭.০ বা তার বেশি স্কোরও প্রয়োজন হয়।

একইভাবে কাজের ভিসার জন্যও IELTS বাধ্যতামূলক। বিশেষ করে Express Entry Program বা Skilled Worker Program-এর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট স্কোর প্রয়োজন। সাধারণত ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য ৬.০ স্কোর হলো ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তা, তবে কাজের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে উচ্চতর স্কোরের প্রয়োজন হতে পারে।

কিছু কিছু কাজের ধরনভেদে IELTS স্কোরের মধ্যে শিথিলতা রয়েছে। যেমন, চাকরির ধরন এবং নিয়োগকর্তার চাহিদার ওপর নির্ভর করে ৫.৫ স্কোর নিয়েও কানাডা যাওয়া যায়। একইভাবে, কিছু স্বল্প দক্ষতার কাজে IELTS স্কোরের প্রয়োজন হয় না।

  • স্নাতক (Undergraduate) প্রোগ্রাম: ন্যূনতম স্কোর ৬.০ থেকে ৬.৫।
  • স্নাতকোত্তর (Postgraduate) প্রোগ্রাম: ন্যূনতম স্কোর ৬.৫ থেকে ৭.০।
  • গবেষণাধর্মী (Research-based) প্রোগ্রাম: স্কোর ৭.০ বা তার বেশি।
  • ওয়ার্ক পারমিট: সাধারণত ৬.০ স্কোর প্রয়োজন হয়।
  • এক্সপ্রেস এন্ট্রি বা স্কিল্ড ওয়ার্কার প্রোগ্রাম: ন্যূনতম স্কোর ৭.০। তবে তার বেশি স্কোরও প্রয়োজন হতে পারে।

IELTS পয়েন্ট কী এবং এর প্রয়োজনীয়তা:

IELTS (International English Language Testing System) একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা। এটি কানাডা সহ অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এবং অভিবাসনের জন্য আবশ্যক। IELTS স্কোরের মাধ্যমে আবেদনকারীর ইংরেজি পড়া, লেখা, শোনা এবং কথা বলার দক্ষতা যাচাই করা হয়।

IELTS পরীক্ষাটি চারটি মূল বিভাগে নেওয়া হয়:

  • রিডিং: ইংরেজি পড়ার দক্ষতা
  • লিসেনিং: ইংরেজি শুনে বুঝতে পারার দক্ষতা
  • রাইটিং: ইংরেজি লিখতে পারার দক্ষতা
  • স্পিকিং: ইংরেজিতে কথা বলতে পারার দক্ষতা

প্রতিটি বিভাগে আলাদা স্কোর থাকে এবং সর্বমোট স্কোর ৯-এর মধ্যে নির্ধারিত হয়।

IELTS করতে কি কি যোগ্যতা লাগে

IELTS পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন নেই। তবে কয়েকটি শর্ত আছে:

  • ন্যূনতম ১৬ বছর বয়স হতে হবে।
  • পূর্ববর্তী শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমাণ করা প্রয়োজন হয় না। তবে ইংরেজি ভাষায় একটি নির্দিষ্ট মানের দক্ষতা থাকা বাঞ্ছনীয়।
  • পরীক্ষার সময় পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে।

পরীক্ষাটি সম্পন্ন করতে সময় লাগে ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। বাংলাদেশ থেকে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়।

IELTS ছাড়া কি কানাডা যাওয়া যায়:

হ্যাঁ, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে IELTS ছাড়া কানাডা যাওয়া সম্ভব। তবে এটি নির্ভর করে ভিসার ধরণ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপর। পর্যটন অর্থাৎ টুরিস্ট ভিসা ও ফ্যামিলি স্পন্সরশিপ ভিসায় কানাডা যেতে IELTS লাগে না।

তবে স্টুডেন্ট এবং ওয়ার্ক ভিসার জন্য IELTS বাধ্যতামূলক। কিছু নির্দিষ্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে IELTS ছাড়াই আবেদন করা সম্ভব। তবে এটি নির্ভর করে ভিসার ধরণ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপর। যেমন, কিছু ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে TOEFL বা PTE স্কোর গ্রহণযোগ্য। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় “Language Pathway Programs” চালু করেছে, যেখানে প্রাথমিকভাবে ইংরেজি শেখার কোর্স করতে হয়।

ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য সাধারণত IELTS বাধ্যতামূলক হলেও, কিছু ন্যূনতম দক্ষতার কাজে IELTS ছাড়া আবেদন করা যেতে পারে। তবে, এ ধরনের প্রোগ্রামের সংখ্যা সীমিত।

ভ্রমণ ভিসায় কানাডা যেতে IELTS প্রয়োজন হয় কিনা

টুরিস্ট বা ভ্রমণ ভিসার জন্য IELTS প্রয়োজন হয় না। যদি আপনি শুধুমাত্র কানাডায় ঘুরতে যান বা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে দেখা করতে চান, তবে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই। তবে, ভিসা ইন্টারভিউ বা আবেদনপত্রে সাধারণ যোগাযোগের জন্য প্রাথমিক ইংরেজি জ্ঞান থাকা ভালো।

এটি মূলত পর্যটকদের জন্য একটি সহজ ভিসা এবং কম ঝামেলাপূর্ণ প্রক্রিয়া।

ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের ভিসায় কানাডা যেতে IELTS লাগে কিনা

কানাডার ওয়ার্ক পারমিট পেতে IELTS স্কোর প্রয়োজন। চাকরির ধরন এবং নিয়োগকর্তার চাহিদার উপর নির্ভর করে, প্রয়োজনীয় স্কোর ৫.৫ থেকে ৭ পর্যন্ত হতে পারে।

  • Skilled Worker Program: ন্যূনতম IELTS স্কোর ৬.০ থেকে ৭.০ প্রয়োজন।
  • Express Entry: উচ্চ স্কোরের প্রয়োজন। ন্যূনতম স্কোর ৭.০। তবে তার বেশি স্কোরও প্রয়োজন হতে পারে।
  • কিছু ন্যূনতম দক্ষতার কাজ: স্বল্প দক্ষতার কাজে IELTS ছাড়া আবেদন করা যেতে পারে, তবে এই ধরনের প্রোগ্রাম সীমিত।

স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডা যেতে IELTS লাগে কিনা:

IELTS ছাড়া কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ভর্তির জন্য IELTS স্কোর আবশ্যক। নির্দিষ্ট কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের IELTS ছাড়াই ভর্তি দেয়। তবে শিক্ষার্থীকে প্রমাণ করতে হবে যে, তার পূর্ববর্তী শিক্ষা ইংরেজি মাধ্যমে হয়েছে।

কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান IELTS-এর বিকল্প হিসেবে TOEFL, PTE বা কানাডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ বেঞ্চমার্ক (CLB) স্কোর গ্রহণ করে। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বাধ্যতামূলক “Language Pathway Programs” চালু করেছে, যেখানে প্রাথমিকভাবে ইংরেজি শেখার কোর্স করতে হয়। তাহলে IELTS ছাড়া কানাডাতে যাওয়া যায়।

ফ্যামিলি ভিসা বা স্পনসরশিপ ভিসায় কানাডা যেতে IELTS লাগে কিনা:

ফ্যামিলি বা স্পনসরশিপ ভিসায় কানাডা যেতে সাধারণত IELTS স্কোর লাগে না। তবে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ইংরেজি ভাষা দক্ষতা অর্জন করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কানাডায় ইংরেজি ভাষা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষা। এই ভাষায় দক্ষতা থাকলে আপনার কানাডায় যাওয়ার পরে কাজ করা এবং পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পেতে বিশেষ সুবিধা হবে।

কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে কত টাকা লাগে

কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসার জন্য খরচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্ভর করে কোর্স এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপর। কানাডায় পড়াশোনার খরচ তুলনামূলকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কম। স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডা যেতে প্রাথমিক খরচ প্রায় ৮-১০ লক্ষ টাকা। তবে স্কলারশিপ পেলে এই খরচ নেমে আসে ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে।

কানাডায় পড়াশোনার খরচ

  • বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি: বছরে ১০ থেকে ২০ লক্ষ টাকা। (প্রায় ৮,০০০-২০,০০০ CAD/বছর)
  • থাকার খরচ: বছরে ৬ থেকে ৮ লক্ষ টাকা। (৪০০-৮০০ CAD/মাস)
  • খাদ্য ও অন্যান্য খরচ: প্রতি মাসে ১৭ থেকে ২৫ হাজার টাকা। (২০০-৩০০ CAD/মাস)
  • স্বাস্থ্যবীমা: বছরে ৫০,০০০ থেকে ১ লক্ষ টাকা। (বাধ্যতামূলক নয়)

কানাডা স্টুডেন্ট ভিসার সুবিধা ও অসুবিধা:

স্টুডেন্ট ভিসার সুবিধা:

  • উচ্চমানের শিক্ষা: কানাডার শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বমানের। এছাড়াও রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা।
  • পার্ট-টাইম চাকরি করার সুযোগ: শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন।
  • স্থায়ী বসবাসের সুযোগ: পড়াশোনা শেষে PR-এর জন্য আবেদন করা যায়।
  • বহুসাংস্কৃতিক পরিবেশ: বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে নতুন কিছু শেখার সুব্যবস্থা।

স্টুডেন্ট ভিসার অসুবিধা:

  • উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয়: টিউশন ফি এবং থাকার খরচ বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি।
  • ভিসা প্রসেসিংয়ে দীর্ঘ সময়: প্রক্রিয়াটি ২ থেকে ৩ মাস সময় নেয়। তবে বছরের সব সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ না থাকায় অনেকের ৭ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত লাগতে পারে।
  •  জব মার্কেট প্রতিযোগিতাপূর্ণ: কানাডায় ভালো চাকরি পাওয়ার জন্য স্থানীয় অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয়।

সর্বশেষ কিছু কথা

কানাডায় পড়াশোনা বা কাজের জন্য যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে IELTS স্কোর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্কোর যত বেশি হবে, তত বেশি সুযোগ এবং অগ্রাধিকার পাবেন। তাই IELTS-এ ভালো ফলাফল করতে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বাড়াতে হবে।

কানাডায় পড়াশোনার জন্য আবেদন করার আগে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং যোগ্যতা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিয়ে আবেদন করুন। কানাডার ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে বিশ্বস্ত এজেন্সি বা সরাসরি হাইকমিশনের মাধ্যমে কাজ করা উচিত।

আপনার স্বপ্নের দেশ কানাডায় পড়াশোনার সুযোগ গ্রহণ করুন এবং একটি সফল ক্যারিয়ারের দিকে এগিয়ে যান।

সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নসমূহ:

কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা পেতে কতদিন লাগে?

কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা পেতে গড়ে ২ থেকে ৩ মাস সময় লাগে। তবে কাগজপত্র সঠিক থাকলে এবং স্ক্রিনিং দ্রুত সম্পন্ন হলে সময় কম লাগতে পারে। অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তির অফার লেটার পেতে দেরি হয়, তখন ভিসা পাওয়ার জন্য ৭ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগতে পারে।

স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডা যাওয়ার জন্য কত বছর বয়স লাগে?

স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডা যাওয়ার জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর বয়স লাগে। তবে কোনো কোনো প্রোগ্রামে ১৬ বছরের শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারে।

কানাডায় পড়াশোনার খরচ কম নাকি আমেরিকায়?

কানাডায় পড়াশোনার খরচ আমেরিকার তুলনায় ২৫% কম। তাই এটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বেশি সাশ্রয়ী।

কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং এজেন্সির নাম কি?

কানাডার স্টুডেন্ট ভিসার জন্য দালালদের পরিবর্তে সরাসরি কানাডিয়ান হাইকমিশনের সহায়তায় আবেদন করতে পারেন। এতে প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসা পেতে সর্বোচ্চ কত সময় লাগে?

কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসা পেতে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ১২ মাস সময় লাগে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top