ইউরোপের একেবারে পশ্চিমে অবস্থিত গৌরবময় ইতিহাস সমৃদ্ধ দেশটি হলো পর্তুগাল। পর্তুগাল ইউরোপের শেঞ্জেনভুক্ত মধ্যম আয়ের একটি দেশ। এখানে খরচের পরিমাণ ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী এবং বেতন কাঠামোও বেশ ভালো।
পর্তুগালের বেতন কাঠামো সেই দেশের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হয়ে থাকে। এখানে একজন শ্রমিকের সর্বনিম্ন মাসিক বেতন ৭৫০ ইউরো থেকে ৮২০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তবে ২০২৬ সালের মধ্যে পর্তুগালের সর্বনিম্ন মাসিক বেতন ৯০০ ইউরো ছাড়িয়ে যাওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বেতন কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে, তাই পেশাভেদে বেতনের ভিন্নতা রয়েছে।
পর্তুগালের সর্বনিম্ন বেতন কত
পর্তুগালে সরকারি বেতন কাঠামো রয়েছে। তাই একজন কর্মীর সর্বনিম্ন বেতন কত হবে তা প্রতিবছর পর্তুগাল সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করা হয়।
বর্তমানে পর্তুগালের সর্বনিম্ন মাসিক বেতন ৮২০ ইউরো, যা ১ লক্ষ টাকার কিছু বেশি। তবে নতুন অবস্থায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের কিছুটা কম বেতন দেওয়ারও প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তখন বেতনের পরিমাণ সর্বনিম্ন ৭০০ ইউরো থেকে ৭৫০ ইউরো পর্যন্ত হয়।
যা বাংলা টাকায় ৮৮ হাজার টাকা থেকে ৯৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়।
তবে কাজে দক্ষ ও পরিশ্রমী হলে ওভারটাইমসহ আরও অনেক বেশি উপার্জনের সুযোগ রয়েছে।
সরকারি তথ্য মতে, ২০২৬ সালের মধ্যে পর্তুগালের সর্বনিম্ন বেতন ৯০০ ইউরো ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পর্তুগালের সর্বোচ্চ বেতন কত
পর্তুগালে কাজের ধরন অনুযায়ী বেতন নির্ধারিত হয়। আর সর্বোচ্চ বেতন যেহেতু অনেকটাই কর্মীর কর্মদক্ষতার ওপর নির্ভর করে, তাই সর্বোচ্চ বেতন সকলের এক হয় না।
পর্তুগালে একজন দক্ষ কর্মীর সর্বোচ্চ বেতন ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা থেকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে যারা আইটি সেক্টরে কাজ করেন, বিশেষ চাহিদা থাকায় তাদের বেতন ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকারও বেশি হয়ে থাকে অনেক সময়।
কাজের ধরণভেদে পর্তুগালের বেতনের তালিকা:
কাজের ধরনের ওপর বেতনের তারতম্যের পাশাপাশি অঞ্চলভেদেও বেতনের কিছুটা পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন, বড় শহরগুলোতে বেশি বেতন পাওয়া যায়।
সাধারণত আইন, চিকিৎসা ও আইটি সেক্টরে বেতনের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে। পাশাপাশি, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বদা তাদের কর্মীদের অন্যান্য ছোট প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেশি বেতন ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে থাকে।
- সাধারণ শ্রমিকদের জন্য পর্তুগালে প্রতি মাসে আনুমানিক বেতন ৯০০ ইউরো থেকে ১৫০০ ইউরো পর্যন্ত হয়।
- শেফ বা রন্ধন শিল্পী হিসেবে পর্তুগালে প্রতি মাসের বেতন ৯৫০ ইউরো থেকে ১৬০০ ইউরো পর্যন্ত হয়।
- কৃষি কাজে পর্তুগালে প্রতি মাসে আনুমানিক বেতন ৮০০ ইউরো থেকে সর্বোচ্চ ১৫৫০ ইউরো পর্যন্ত হয়।
- প্লাম্বিং কাজে পর্তুগালে গড় আনুমানিক বেতন ১২০০ ইউরো থেকে ১৬০০ ইউরো।
- ইলেকট্রিক কাজের জন্য পর্তুগালে ইলেকট্রিশিয়ানদের আনুমানিক বেতন ৮৫০ ইউরো থেকে ১৬০০ ইউরো পর্যন্ত হয়।
- কনস্ট্রাকশনের কাজে প্রতি মাসে পর্তুগালে আনুমানিক বেতন ৯৫০ ইউরো থেকে ১৫৮০ ইউরো পর্যন্ত হয়।
- ড্রাইভিং কাজে প্রতি মাসে পর্তুগালে আনুমানিক বেতন ১২০০ ইউরো থেকে ১৮০০ ইউরো পর্যন্ত হয়।
- গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে প্রতি মাসে পর্তুগালে বেতন ৮২০ ইউরো থেকে ১০৫০ ইউরো পর্যন্ত হয়।
- ক্লিনিং কাজের জন্য পর্তুগালে প্রতি মাসের বেতন ৮৭০ ইউরো থেকে ১৪৫০ ইউরো পর্যন্ত হয়।
- ডেলিভারি ম্যান হিসেবে পর্তুগালে প্রতি মাসের বেতন ১২০০ ইউরো থেকে ২১০০ ইউরো পর্যন্ত হয়।
- এছাড়াও রিসেপশন ও দোকানের সেলসম্যান হিসেবে পর্তুগালে আনুমানিক বেতন ১০০০ ইউরো থেকে ১৯০০ ইউরো পর্যন্ত হয়।
পর্তুগাল ফ্যাক্টরি কাজের সর্বনিম্ন বেতন
ফ্যাক্টরি একটি দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা দেশের উৎপাদন ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পর্তুগালে অনেক ফ্যাক্টরি রয়েছে। এসব ফ্যাক্টরি চালাতে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন এবং অন্যান্য কাজের তুলনায় ফ্যাক্টরিতে কাজ পাওয়া খুব সহজ পর্তুগালে।
ফ্যাক্টরিতে কাজ করা একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মাসিক বেতন সাধারণত €৯৫০ ইউরো থেকে €১,১০০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ডেলিভারি ম্যানের পর্তুগালে সর্বনিম্ন বেতন
পর্তুগালে ডেলিভারি ম্যানের কাজের চাহিদা প্রচুর। এবং কোনো রকম অভিজ্ঞতা ছাড়াই খুব সহজেই আপনি চাইলে Uber Eats, Glovo, বা Bolt-এর মতো কোম্পানিগুলোতে কাজ করতে পারবেন।
পর্তুগালে একজন ডেলিভারি ম্যানের বেতন সর্বনিম্ন €৯০০ ইউরো থেকে €১,০০০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া, যদি একজন ডেলিভারি ম্যান অতিরিক্ত ঘণ্টা কাজ করেন, তাহলে সেই অতিরিক্ত ঘণ্টা অনুযায়ী আরও বেশি টাকা আয় করতে পারেন।
পর্তুগালে ইলেকট্রিশিয়ানের সর্বনিম্ন বেতন
পর্তুগালে একজন ইলেকট্রিশিয়ানের বেতন নির্ভর করে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার উপর। তবে, ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, পর্তুগালের বেশিরভাগ শহরে একজন সাধারণ ইলেকট্রিশিয়ানের সর্বনিম্ন মাসিক বেতন সাধারণত €৮৫০ ইউরো থেকে €১,০০০ ইউরোর মধ্যে হতে পারে। তবে, বৃহৎ শহরগুলোতে, যেমন লিসবন বা পোর্তো, সেখানে বেতন একটু বেশি হতে পারে।
পর্তুগালে কনস্ট্রাকশন লেবারের সর্বনিম্ন বেতন
কনস্ট্রাকশনের কাজ খুবই কষ্টকর। কষ্টের কাজ হওয়া সত্ত্বেও অন্যান্য কাজের মতো মাসিক বেতন প্রায় সমান।
পর্তুগালে কনস্ট্রাকশন লেবারের সর্বনিম্ন মাসিক বেতন €৮২০ ইউরো থেকে €৯৫০ ইউরো। অভিজ্ঞতা এবং বিশেষ ধরনের কাজের জন্য এই বেতন কিছুটা বেশি হতে পারে। পাশাপাশি, কিছু নির্মাণ প্রকল্প বা কর্মক্ষেত্রে যদি কর্মীরা বেশি পরিশ্রম করেন বা বিশেষ দক্ষতা থাকে, তাহলে তাদের বেতন আরও বাড়বে।
পর্তুগালে কোন কাজের চাহিদা বেশি
পর্তুগালে কিছু কিছু কাজে কর্মী সংকট থাকায় এসব কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আর চাহিদা বেশি মানে এসব কাজ করে অধিক অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। যেসব কাজের চাহিদা বেশি সেই কাজগুলো হচ্ছে:
- ড্রাইভিং
- ফুড এবং পার্সেল ডেলিভারি ম্যান
- দোকানের সেলসম্যান
- আইনজীবী
- ডেটা এনালিস্ট
- ইঞ্জিনিয়ার
- নার্স ও
- ডাক্তার
তবে বাংলাদেশিদের মধ্যে হাতের কাজের ওপর দক্ষতা ভিত্তিক কাজ করার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এ ধরনের যেসব কাজের চাহিদা ব্যাপক সেগুলো হচ্ছে:
- প্লাম্বার
- পর্যটন কর্মী
- কনস্ট্রাকশন শ্রমিক
- ইলেকট্রিশিয়ান
- মেকানিক
- ওয়েল্ডার
- পেইন্টার ও
- রাজমিস্ত্রি বা নির্মাণ শ্রমিকের কাজ।
বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যাওয়ার নিয়ম
বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যাওয়ার জন্য ভিসার প্রয়োজন হবে। পর্তুগাল যাওয়ার জন্য অনেক ধরনের ভিসা রয়েছে। বাংলাদেশে পর্তুগালের কোনো এম্বাসি বা দূতাবাস না থাকায়, ইন্ডিয়ার রাজধানী দিল্লিতে অবস্থিত পর্তুগালের দূতাবাস থেকে ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। পরবর্তীতে আবেদন গ্রহণযোগ্য হলে পর্তুগালে যাওয়া যায়।
বাংলাদেশ থেকে পর্তুগালের ভিসার দাম কত
ভিসার দাম ভিসার ধরনের ওপর নির্ভর করে কম-বেশি হতে পারে। তবে সবচেয়ে কম খরচে ভিজিট ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা ও মেডিকেল ভিসা নিয়ে পর্তুগাল যাওয়া যায়। পর্তুগালের ভিসার জন্য সর্বনিম্ন ২ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।
সর্বশেষ কিছু কথা
ওপরে বর্ণিত বেতন কাঠামোটি সম্পূর্ণই একজন বৈধ অধিবাসীর জন্য প্রযোজ্য। অনেকেই অবৈধ পথে পর্তুগাল যাওয়ার চেষ্টা করেন, অনেকে সফলও হন।
তবে অবৈধদের বেতন কাঠামো বৈধ অধিবাসীদের মতো হবে না। অনেক সময় এই কাঠামোর অর্ধেক বেতনেও অবৈধ শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা যায়।
আর পর্তুগালে কাজের ভিসা সব সময় খোলা থাকে না। দালাল বা অপরিচিত বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে প্রতারিত না হয়ে, প্রথমে পর্তুগাল এম্বাসি থেকে খোঁজ নিন যে কাজের ভিসা খোলা আছে কি না।