পাসপোর্ট আবেদন করার সময় অনেকেই দ্বিধায় পড়েন যে পেশা হিসেবে কী উল্লেখ করবেন। কারণ ভুল পেশা উল্লেখ করলে ভবিষ্যতে ভিসা আবেদন বা পুলিশ ভেরিফিকেশনে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো কোন পরিস্থিতিতে কোন পেশা উল্লেখ করা উচিত এবং কোন ভুলগুলো এড়িয়ে চলা ভালো।
পাসপোর্ট করার সময় কী পেশা দেওয়া উত্তম
পাসপোর্টের আবেদনপত্রে আপনার প্রকৃত পেশা উল্লেখ করাই সর্বোত্তম। কারণ ভুল পেশা দিলে পরবর্তী সময়ে পুলিশ ভেরিফিকেশনে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- শিক্ষার্থী ও বেকার ব্যক্তিরা: যদি আপনি ছাত্র হন, তাহলে “Student” উল্লেখ করতে পারেন। অন্যদিকে, যদি আপনি কর্মহীন বা পড়াশোনা শেষ করে বেকার থাকেন তবে “Unemployed” বা “Bachelor” ব্যবহার করতে পারেন। তবে, শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে পূর্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা উত্তম।
- চাকুরিজীবীরা: সরকারি চাকরিজীবীরা তাদের কাজের ধরন অনুযায়ী পেশা উল্লেখ করবেন এবং তাদের ক্ষেত্রে NOC/GO লাগতে পারে। বেসরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে “Private Service” উল্লেখ করাই ভালো।
- শ্রমিক বা দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কাজের মানুষ: যারা শ্রমিক বা মজুর শ্রেণির পেশায় রয়েছেন তারা “Labour” বা “Skilled Worker” উল্লেখ করতে পারেন।
- বয়স্ক বা অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা: অবসরপ্রাপ্ত বা চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়া ব্যক্তিরা “Retired” বা “Unemployed” লিখতে পারেন।
বাচ্চাদের পাসপোর্ট এর পেশা কি দিব
শিশুদের জন্য পাসপোর্ট আবেদন করতে গেলে তাদের পেশা উল্লেখ করার ক্ষেত্রে “OTHERS” নির্বাচন করাই যথাযথ। কারণ শিশুরা কোনো চাকরির সাথে যুক্ত নয়।
এছাড়া, পাসপোর্ট আবেদনের সময় শিশুর জন্ম সনদ সংযুক্ত করতে হয়, তাই পেশা হিসেবে “OTHERS” দেওয়া হলে কোনো বাড়তি নথিপত্র জমা দেওয়ার দরকার হয় না।
আরো পড়ুন: পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
পাসপোর্ট আবেদনের পিতা-মাতার পেশা কি দেওয়া উচিত
পাসপোর্ট আবেদনের সময় পিতা-মাতার পেশা উল্লেখ করতে হয়। এক্ষেত্রে যদি পিতা-মাতা জীবিত থাকেন এবং কর্মরত থাকেন, তবে তাদের প্রকৃত পেশা উল্লেখ করাই উত্তম।
- মা যদি গৃহিণী হন: তাহলে “Housewife” উল্লেখ করতে হবে।
- বাবার পেশা: যদি সরকারি বা বেসরকারি চাকরিজীবী হন, তবে সেই অনুযায়ী পেশা উল্লেখ করুন। যদি বাবা মৃত হয়ে থাকেন, তাহলে “Others” নির্বাচন করাই সঠিক।
পাসপোর্টে পেশা ছাত্র দিলে কি পরবর্তী কালে কাজের জন্য বিদেশ যাওয়া যাবে
অনেকেই মনে করেন যে পাসপোর্টে “Student” লিখলে ভবিষ্যতে বিদেশে কাজের জন্য সমস্যা হবে। প্রকৃতপক্ষে, এটি নির্ভর করে যে আপনি কোন দেশের জন্য ভিসা আবেদন করছেন।
- পর্যটন বা স্টুডেন্ট ভিসা: যদি আপনি পর্যটন বা স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করেন, তবে পাসপোর্টে “Student” উল্লেখ থাকলে কোনো সমস্যা হবে না।
- ওয়ার্ক পারমিট ভিসা: যদি আপনি ভবিষ্যতে ওয়ার্ক পারমিট বা চাকরির জন্য ভিসা আবেদন করতে চান, তবে আপনার পাসপোর্টের পেশা পরিবর্তন করা লাগতে পারে।
- কাজের অভিজ্ঞতা: অনেক দেশে ওয়ার্ক পারমিট পেতে হলে পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণ দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে যদি আপনার পাসপোর্টে “Student” লেখা থাকে এবং আপনার বাস্তবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকে, তবে পেশা পরিবর্তন করার জন্য অতিরিক্ত ডকুমেন্ট লাগতে পারে।
সুতরাং, যদি ভবিষ্যতে চাকরির জন্য বিদেশ যেতে চান, তবে আপনার পাসপোর্টে পেশা পরিবর্তন করার সুযোগ আছে কিনা তা নিশ্চিত করে আবেদন করুন।
পাসপোর্ট এ পেশা লেবার দিলে কি ভিসা পেতে সমস্যা হবে নাকি?
অনেকে মনে করেন যে পাসপোর্টে “Labour” লিখলে বিদেশে ওয়ার্ক পারমিট পেতে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এটি নির্ভর করে যে আপনি কোন দেশে ভিসার জন্য আবেদন করছেন।
- মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ক্ষেত্রে: যদি আপনি মধ্যপ্রাচ্যের (যেমন সৌদি আরব, কাতার, দুবাই) দেশগুলোর জন্য লেবার ভিসার আবেদন করেন, তবে “Labour” পেশা উল্লেখ করাই ভালো। কারণ এই দেশগুলোতে শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ভিসার ব্যবস্থা রয়েছে।
- উন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রে: ইউরোপ, কানাডা বা আমেরিকাতে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার জন্য সাধারণত উচ্চ দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা দরকার হয়। সে ক্ষেত্রে যদি আপনার পাসপোর্টে “Labour” উল্লেখ থাকে তবে আপনাকে কাজের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা প্রমাণ করতে হতে পারে।
উপসংহার
পাসপোর্টের পেশা নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ভুল পেশা উল্লেখ করলে ভবিষ্যতে ভিসা আবেদন কিংবা পুলিশ ভেরিফিকেশনে সমস্যা হতে পারে। তাই প্রকৃত পেশা অনুযায়ী তথ্য প্রদান করাই উত্তম। যদি ভবিষ্যতে পেশা পরিবর্তন করার পরিকল্পনা থাকে, তবে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।