বাংলাদেশ সরকার ই-পাসপোর্ট চালু করার মাধ্যমে পাসপোর্ট ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করেছে। এখন ঘরে বসেই অনলাইনে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা সম্ভব।
ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। সঠিক প্রক্রিয়া মেনে আবেদন করলে সহজেই পাসপোর্ট সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।
ই-পাসপোর্ট কী?
ই-পাসপোর্ট (Electronic Passport) হলো একটি উন্নতমানের পাসপোর্ট, যেখানে একটি ইলেকট্রনিক চিপ সংযুক্ত থাকে। এই চিপে পাসপোর্টধারীর ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, ও বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
ই-পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
- বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে।
- পূর্ববর্তী মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (যদি থাকে)।
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদ।
- প্রয়োজনীয় ছবি ও বায়োমেট্রিক তথ্য।
ই-পাসপোর্টের প্রকারভেদ
বাংলাদেশে সাধারণত তিন ধরনের ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়:
- সাধারণ পাসপোর্ট (Ordinary Passport) – সাধারণ নাগরিকদের জন্য।
- অফিসিয়াল পাসপোর্ট (Official Passport) – সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য।
- কূটনৈতিক পাসপোর্ট (Diplomatic Passport) – রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য।
ই-পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজপত্র লাগে
ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার আগে নিচের কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে:
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) – আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হলে
- অনলাইন আবেদন ফরমের প্রিন্ট কপি
- জন্ম নিবন্ধন সনদ – ১৮ বছরের নিচে হলে
- পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি – ১৮ বছরের নিচে হলে
- বিদ্যুৎ বিলের কপি বা নাগরিকত্ব সনদ
- সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য চাকরির প্রমাণপত্র
- আগের পাসপোর্ট থাকলে তার কপি
ই-পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম: (ধাপসমূহ)
১. ভিজিট করুন e-passport.gov.bd ওয়েবসাইট
প্রথমে ই-পাসপোর্ট অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করুন এবং “Apply Online” অপশন নির্বাচন করুন।
২. পাসপোর্ট অফিস এবং থানা নির্বাচন
আপনার স্থায়ী ঠিকানা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিস এবং থানা নির্বাচন করুন।
৩. ইমেল আইডি ভেরিফিকেশন
আপনার ইমেল আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন এবং ইমেল ভেরিফিকেশন লিংকে ক্লিক করে একাউন্ট অ্যাক্টিভ করুন।
৪. পাসপোর্টের ধরন বাছাই
আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ৫ বছর বা ১০ বছরের মেয়াদ এবং ৪৮ বা ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট নির্বাচন করুন।
৫. ই-পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করুন
ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্মতারিখ ইত্যাদি সঠিকভাবে পূরণ করুন।
৬. ই-পাসপোর্ট ফরম পূরণের নির্দেশাবলী:
ঠিকানা নির্বাচন করুন
আপনার স্থায়ী বা বর্তমান ঠিকানা প্রদান করুন।
ID Documents
জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন নম্বর প্রদান করুন।
পিতা-মাতা তথ্য প্রদান করুন
পিতার ও মাতার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর প্রদান করুন।
বৈবাহিক স্ট্যাটাস
আপনার বৈবাহিক অবস্থা (বিবাহিত/অবিবাহিত) উল্লেখ করুন।
Emergency Contact
জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য একজনের নাম ও মোবাইল নম্বর প্রদান করুন।
পাসপোর্টের ধরন বাছাই করুন
সাধারণ, অফিসিয়াল বা কূটনৈতিক পাসপোর্ট নির্বাচন করুন।
ডেলিভারির ধরন সিলেক্ট করুন
সাধারণ, জরুরি বা অতীব জরুরি ডেলিভারি অপশন নির্বাচন করুন।
Passport Fee প্রদান করুন
অনলাইনে ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নির্ধারিত ফি প্রদান করুন।
আবেদন কপি প্রিন্ট করুন
অনলাইন ফর্ম পূরণের পর একটি কপি প্রিন্ট করে রাখুন।
ডকুমেন্টস ও বায়োমেট্রিক প্রদান করুন
নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন এবং ছবি, আঙুলের ছাপ ও আইরিশ স্ক্যান করান।
পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন
এসএমএস পাওয়ার পর নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন।
ই-পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে?
পাসপোর্টের ধরন | সাধারণ (২১ দিন) | জরুরি (১০ দিন) | অতীব জরুরি (২ দিন) |
---|---|---|---|
৪৮ পৃষ্ঠা, ৫ বছর | ৪,০২৫ টাকা | ৬,৩২৫ টাকা | ৮,৬২৫ টাকা |
৪৮ পৃষ্ঠা, ১০ বছর | ৫,৭৫০ টাকা | ৮,০৫০ টাকা | ১০,৩৫০ টাকা |
৬৪ পৃষ্ঠা, ৫ বছর | ৬,৩২৫ টাকা | ৮,৬২৫ টাকা | ১২,০৭৫ টাকা |
৬৪ পৃষ্ঠা, ১০ বছর | ৮,০৫০ টাকা | ১০,৩৫০ টাকা | ১৩,৮০০ টাকা |
ই-পাসপোর্টের সুবিধাসমূহ
- উন্নত নিরাপত্তা: নকল করা কঠিন এবং জালিয়াতি প্রতিরোধে কার্যকর।
- দ্রুত প্রসেসিং: ইমিগ্রেশন চেকপয়েন্টে স্ক্যানের মাধ্যমে দ্রুত যাচাই করা যায়।
- আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা: উন্নত দেশগুলোতে সহজে প্রবেশের সুযোগ।
- বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ: ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং চোখের রেটিনা স্ক্যান অন্তর্ভুক্ত।
-
ই-গেট ব্যবহার করে দ্রুত ইমিগ্রেশন পার হওয়া যায়।
-
সহজ ও দ্রুত আবেদনের প্রক্রিয়া।
-
অনলাইনে আবেদন ও পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করার সুবিধা।
MRP থেকে ই-পাসপোর্ট রুপান্তর করতে কি করতে হয়?
MRP (Machine Readable Passport) থেকে ই-পাসপোর্টে রূপান্তরের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে এবং পুরাতন MRP জমা দিতে হবে। নতুন ই-পাসপোর্টের জন্য পুরাতন MRP এর তথ্য যাচাই করা হয়।
সবচেয়ে কম সময়ে ই-পাসপোর্ট কিভাবে পাব?
দ্রুত পাসপোর্ট পেতে অতীব জরুরি (২ দিন) প্রসেসিং টাইপ বেছে নিন এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন দ্রুত নিশ্চিত করুন। এছাড়া, সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিকঠাক জমা দিন।
ই-পাসপোর্ট সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- ১৮ বছরের নিচে আবেদনকারীদের জন্য জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট আবশ্যক।
- অনলাইনে আবেদন সাবমিট করার পর সেটি প্রিন্ট করে জমা দিতে হবে।
- যে কোন সমস্যায় পাসপোর্ট অফিসের হেল্পলাইন (১৬২৩৪) নম্বরে যোগাযোগ করুন।
উপসংহার
ই-পাসপোর্ট বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি আধুনিক এবং নিরাপদ ভ্রমণ নথি। এটি প্রক্রিয়াকরণে সময় কম নেয় এবং বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য। সহজে ও দ্রুত পাসপোর্ট পেতে উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
ই-পাসপোর্ট সংক্রান্ত সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
ই-পাসপোর্ট কতদিনের জন্য বৈধ?
ই-পাসপোর্ট ৫ বছর বা ১০ বছরের জন্য ইস্যু করা হয়।
পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে করণীয় কী?
নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি (GD) করে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করুন।
ই-পাসপোর্ট দিয়ে কীভাবে ইমিগ্রেশন করা যায়?
বিমানবন্দরে ই-গেট ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইমিগ্রেশন করা যায়।
ই-পাসপোর্ট করার জন্য কি বয়সসীমা আছে?
না, নবজাতক থেকে বৃদ্ধ—সকলেই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন।
অনলাইন ফরম পূরণে কোনো সমস্যা হলে কী করবো?
নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন অথবা হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করুন।