বিদেশ ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট একটি অত্যাবশ্যকীয় নথি। বাংলাদেশে বর্তমানে শুধুমাত্র ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়, এবং পুরনো মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) আর ইস্যু করা সম্ভব নয়।
আপনি যদি নতুন পাসপোর্ট করতে চান বা পুরনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে চান, তাহলে কিছু নির্দিষ্ট ডকুমেন্টস ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। এই নিবন্ধে বিস্তারিতভাবে পাসপোর্টের ধরন ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
পাসপোর্ট এর ধরন সমূহ
বাংলাদেশে পাসপোর্ট সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে:
- শিশুদের পাসপোর্ট – ২০ বছরের নিচে শিশুদের জন্য ইস্যু করা হয়।
- প্রাপ্তবয়স্কদের পাসপোর্ট – সাধারণ নাগরিকদের জন্য ইস্যু করা হয়।
- সরকারি চাকরিজীবীদের পাসপোর্ট – সরকারি কাজে বিদেশ ভ্রমণের জন্য বিশেষ সরকারি অনুমোদনসহ ইস্যু করা হয়।
পাসপোর্টের ধরন অনুযায়ী আবেদনের শর্ত ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভিন্ন হয়ে থাকে।
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হলে অনলাইনে আবেদন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদান করতে হবে। পাসপোর্টের মেয়াদ ৫ বছর বা ১০ বছর হতে পারে। আবেদনকারীর বয়স ও পেশার ভিত্তিতে আলাদা আলাদা কাগজপত্র প্রয়োজন হয়।
সাধারণভাবে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম নিবন্ধন (শিশুদের জন্য)
- পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (শিশুদের জন্য)
- নাগরিক সনদপত্র
- পেশা প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালান
- নির্দিষ্ট সাইজের ছবি (3R Size)
এখন চলুন, বিস্তারিতভাবে প্রতিটি ক্যাটাগরির জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
১. শিশুদের পাসপোর্ট এর আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- শিশুর অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ (NID না থাকলে বাধ্যতামূলক)
- পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি (অবশ্যক)
- অনলাইন আবেদন ফরমের কপি (৩ পৃষ্ঠা)
- আবেদন ফি ব্যাংক চালানের কপি
- টিকা কার্ড (প্রয়োজনে)
- 3R সাইজের ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে)
শিশুদের পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব NID না থাকায় পিতা-মাতার পরিচয়পত্র ও অন্যান্য ডকুমেন্টস জমা দিতে হয়।
২. প্রাপ্তবয়স্কদের পাসপোর্ট আবেদনের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) কপি (বাধ্যতামূলক)
- নাগরিক সনদপত্র (ইউনিয়ন বা পৌরসভার চেয়ারম্যান কর্তৃক)
- ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ/পানি/গ্যাস)
- অনলাইন আবেদন ফরমের কপি (৩ পৃষ্ঠা)
- আবেদন ফি পরিশোধের চালান
- পেশাগত পরিচয়পত্র (শিক্ষার্থী হলে স্টুডেন্ট কার্ড, চাকরিজীবী হলে চাকরির পরিচয়পত্র)
- পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি (ঐচ্ছিক)
- বিবাহিত হলে নিকাহনামা
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে গার্ডিয়ানদের কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় না, তবে পরিচয় যাচাইয়ের জন্য নাগরিক সনদ ও অন্যান্য কাগজপত্র বাধ্যতামূলক।
৩. সরকারি চাকরিজীবীদের পাসপোর্ট আবেদনের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) কপি
- নাগরিক সনদপত্র
- ইউটিলিটি বিলের কপি
- অনলাইন আবেদন ফরমের কপি (৩ পৃষ্ঠা)
- আবেদন ফি পরিশোধের চালান
- পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি (ঐচ্ছিক)
- বিবাহিত হলে নিকাহনামা
- NOC (No Objection Certificate) অথবা GO (Government Order)
সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকদের তুলনায় NOC ও GO ডকুমেন্ট দুইটি বেশি লাগে। বিশেষত সরকারি কর্মকর্তারা যদি সরকারি কাজে বিদেশ ভ্রমণ করতে চান, তবে GO (Government Order) জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
উপসংহার
বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট আবেদন এখন অনলাইন ভিত্তিক এবং সহজলভ্য। তবে আবেদনকারীর ধরন অনুযায়ী কাগজপত্র ভিন্ন হয়ে থাকে। সঠিক তথ্য প্রদান এবং নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করলেই পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া সহজ ও ঝামেলামুক্ত হবে। তাই যারা নতুন পাসপোর্ট করতে চান, তারা অনলাইনে আবেদন করার আগে উপযুক্ত ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে নিশ্চিত হয়ে নিন।