পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতি ও প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী দেশ আমেরিকা। কাজ, পড়ালেখা ও স্থায়ী বসবাসের জন্য বাংলাদেশিদের মনে অন্যতম প্রধান পছন্দ হচ্ছে আমেরিকা। তবে এই পছন্দকে বাস্তবে রূপ দিতে অন্যতম প্রধান বাধা হচ্ছে খরচ।
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যাওয়ার খরচ অন্যান্য যেকোনো দেশে যাওয়ার খরচের তুলনায় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশিদের জন্য আমেরিকা যেতে আনুমানিক ১২ লক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে থাকে। তবে ভিসার ধরন অনুসারে খরচের পরিমাণ উঠানামা করে। যেমন, স্কলারশিপসহ স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আমেরিকা গেলে ন্যূনতম ৬ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষ টাকায় আমেরিকা যাওয়া সম্ভব।
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে সর্বনিম্ন ৮ লক্ষ টাকা থেকে ১৫ লক্ষ টাকা লাগে এবং সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ টাকা থেকে ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। সরকারি-বেসরকারি উভয় এজেন্সির মাধ্যমেই আমেরিকা যাওয়া যায়। সরকারি মাধ্যমে আমেরিকা যেতে সর্বনিম্ন ৬ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে।
তবে এর মধ্যে পাসপোর্ট তৈরি, মেডিকেল রিপোর্ট, ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট, পুলিশ ভেরিফিকেশন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ভিসার ধরন ও প্লেনের টিকিটের ক্যাটাগরির ভিত্তিতে যাওয়ার খরচের পরিমাণ কিছুটা কম-বেশি হতে পারে।
আমেরিকা ভিসার দাম বা আবেদন খরচ কত
যেহেতু ভিসার ধরনভেদে আমেরিকা যাওয়ার সর্বমোট খরচের তারতম্য হয়ে থাকে, তাই কোন ভিসার জন্য আবেদন করতে কত টাকা খরচ হয় এবং আবেদন ফি কত, সেই সম্পর্কে জানা জরুরি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসা রয়েছে। যেমন: স্টাডি ভিসা, ট্যুরিস্ট ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, মেডিকেল ভিসা ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে ইনভেস্টমেন্ট ভিসার মতো ইবি সিরিজের ১-৫ পর্যন্ত ভিসা।
- আমেরিকা স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন ফি $১৮৫ ডলার, যা প্রায় ২২ হাজার বাংলাদেশি টাকা।
- আমেরিকা টুরিস্ট ভিসার আবেদন ফি $১৮৫ ডলার, যা প্রায় ২২ হাজার বাংলাদেশি টাকা।
- আমেরিকা অস্থায়ী ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন ফি $২০৫ ডলার, যা প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি টাকা।
- আমেরিকা স্থায়ী ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের ভিসার জন্য আবেদন ফি $৩৪৫ ডলার, যা প্রায় ৪২,০০০ বাংলাদেশি টাকা।
- আমেরিকা মেডিকেল ভিসার খরচ $১৮৫ ডলার, যা প্রায় ২২ হাজার বাংলাদেশি টাকা।
- আমেরিকায় আত্মীয়ের জন্য অভিবাসী ভিসার আবেদন ফি $৬৭৫ ডলার, যা প্রায় ৮০,০০০ বাংলাদেশি টাকা।
- আমেরিকাতে ইনভেস্টমেন্ট বা বিনিয়োগ ভিসার জন্য আবেদন ফি $৩১৫ ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৩৮ হাজার বাংলাদেশি টাকা।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে
কাজের ভিসাকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বলা হয়ে থাকে। সরকারিভাবে অনেক সময় ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া যায়। সরকারি ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় আমেরিকা যেতে ৬ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষ টাকা লাগে।
তবে বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে আমেরিকার ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য বেশি অর্থ খরচ করতে হয়। বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় আমেরিকা যেতে আনুমানিক ১০ লক্ষ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা লাগে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ কিছুটা কম-বেশি হয়ে থাকে। তবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় এমন পেশা নির্ধারণ করতে হবে যেই পেশার লোক আমেরিকাতে কম কিন্তু এসব কাজে দক্ষ কর্মীর অনেক চাহিদা রয়েছে।
ড্রাইভিং ভিসায় আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে
ড্রাইভিং ভিসা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার অন্তর্ভুক্ত। মালিকানাধীন গাড়ির ড্রাইভারের চাহিদা আমেরিকাতে রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে লরি বা বড় ট্রাক ড্রাইভারের। একজন ট্রাক ড্রাইভার আমেরিকাতে প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ১৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারে।
বাংলাদেশ থেকে ড্রাইভিং ভিসায় আমেরিকা যেতে ন্যূনতম ৬ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।
ক্লিনার ভিসায় আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে
ক্লিনার ভিসা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার অন্তর্ভুক্ত। এই ভিসার জন্য ন্যূনতম ৫ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়ে থাকে। আমেরিকায় ক্লিনিং কাজের ভালো চাহিদা থাকায় এই ভিসা সহজেই পাওয়া যায়।
কোম্পানি ভিসায় আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে
কোম্পানি ভিসা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার অন্তর্গত। সরাসরি যোগ্যতার ভিত্তিতে কোনো আমেরিকান কোম্পানিতে কাজের জন্য নির্বাচিত হলে ভিসার আবেদন খরচের পাশাপাশি বিমান ভাড়া ও অন্যান্য ছোটখাটো খরচ ছাড়া আর কোনো খরচ নেই। এই খরচের পরিমাণ সর্বনিম্ন ৪ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। LinkedIn সহ অনেক জব প্ল্যাটফর্মে আমেরিকার প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য আবেদন করে ওই কোম্পানি কর্তৃক নির্বাচিত হলে এই ভিসা সহজেই পাওয়া যায়।
তবে দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে কোম্পানির ভিসা নিতে ১৫ লক্ষ টাকা থেকে ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।
স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে
স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে সর্বনিম্ন ৫ লক্ষ টাকা থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। তবে এই ভিসা পাওয়ার জন্য আপনার একাডেমিক ফলাফল ভালো হতে হবে, পাশাপাশি একটি ভালো আইইএলটিএস স্কোর বা সমমানের ইংরেজি ভাষা যোগ্যতার পরীক্ষায় ভালো নম্বর থাকতে হবে।
আমেরিকাতে পড়ালেখার খরচ অনেক ব্যয়বহুল। স্কলারশিপ না পেলে ঐ প্রতিষ্ঠানের ১ বছরের পড়ালেখার খরচের সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংকে জমা করার প্রয়োজন হতে পারে।
https://bd.usembassy.gov/visas/ এই ওয়েবসাইট থেকে আমেরিকার স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়।
মেডিকেল ভিসায় আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে
উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেক মানুষ আমেরিকাতে যেতে চান। আমেরিকার মেডিকেল ভিসার জন্য প্রথমে আবেদন ফি হিসেবে ২২ হাজার টাকা জমা করতে হয়। এবং আবেদনের পাশাপাশি মেডিকেল রিপোর্ট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়। পরবর্তীতে আমেরিকার ভিসার জন্য নির্বাচিত হলে বিমানের টিকিট ও অন্যান্য ছোটখাটো খরচসহ আনুমানিক সর্বনিম্ন ৩ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।
টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে
টুরিস্ট ভিসায় আমেরিকাতে যাওয়ার জন্য প্রথমে এই ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। আবেদন ফি $১৮৫ ডলার বা ২২ হাজার টাকার আশেপাশে হয়ে থাকে। এই ভিসার মেয়াদ ৬ মাস।
বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ টুরিস্ট ভিসায় গিয়ে আর ফেরত না আসায় আমেরিকান সরকার এই বিষয়ে অনেক কঠোর। তাই প্রথমে আপনার বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভ্রমণ করেছেন এমন নথির প্রয়োজন হবে।
সাথে ভ্রমণের উদ্দেশ্য, বিমানের রিটার্ন টিকিট, হোটেল রিজার্ভেশন, ইত্যাদির প্রয়োজন হতে পারে। সব মিলিয়ে এতে আপনার ন্যূনতম ৫ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৯ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
আমেরিকায় বেতন কত
আমেরিকাতে বেতনের হিসাব ঘণ্টাপ্রতি, অর্থাৎ কত ঘণ্টা কাজ করা হয়েছে তার ওপর নির্ধারণ করা হয়। আমেরিকার সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ঘণ্টাপ্রতি সর্বনিম্ন বেতন $৭.২৫ ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় দাঁড়ায় প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৮৭০ টাকা।
বর্তমানে আমেরিকাতে প্রচুর দক্ষ কর্মীর চাহিদা রয়েছে। তাই সহজেই কাজ পাওয়া যায়। আর দক্ষ লোকের সংকটের কারণে বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বেশি।
আমেরিকাতে প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ২ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ৪ লক্ষ টাকার বেশি পর্যন্ত উপার্জন করা সম্ভব।
আমেরিকাতে কাজের জন্য গড় বেতন প্রতি মাসে $৫৬৭৭ ডলার, অর্থাৎ ৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। এবং গড় বাৎসরিক বেতন $৬৮,১২৪ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় বাৎসরিক প্রায় ৮১ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন
- বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যাওয়ার নিয়ম
- বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায়
- আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা সমূহ
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা বিমান ভাড়া কত
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগবে, তার একটা বড় অংশ নির্ধারণ করে বিমান ভাড়া। ভৌগোলিকভাবে আমেরিকা একটি বিশাল রাষ্ট্র। এক শহর থেকে আরেক শহরের দূরত্বও অনেক বেশি। তাই আপনি যে শহরে যেতে চাচ্ছেন, তার ওপর নির্ভর করে আপনার বিমান ভাড়া কত হবে। বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার বিভিন্ন শহরে যেতে কত টাকা লাগবে, তার একটি ধারণা দেওয়া হলো:
– বাংলাদেশের ঢাকা থেকে আমেরিকার ওয়াশিংটনের বিমান ভাড়া ১৯২,০০০ টাকা থেকে ২১৬,০০০ টাকা।
– বাংলাদেশের ঢাকা থেকে আমেরিকার ডালাসের বিমান ভাড়া ২১৬,০০০ টাকা থেকে ২২২,০০০ টাকা।
– বাংলাদেশের ঢাকা থেকে আমেরিকার সিয়াটলের বিমান ভাড়া ২৫২,০০০ টাকা থেকে ২৭০,০০০ টাকা।
– বাংলাদেশের ঢাকা থেকে আমেরিকার নিউইয়র্কের বিমান ভাড়া ১৬৮,০০০ টাকা থেকে ১৯২,০০০ টাকা।
– বাংলাদেশের ঢাকা থেকে আমেরিকার শিকাগোর বিমান ভাড়া ১৬৮,০০০ টাকা থেকে ১৯৮,০০০ টাকা।
– বাংলাদেশের ঢাকা থেকে আমেরিকার বোস্টন শহরের বিমান ভাড়া ১৮০,০০০ টাকা থেকে ২৪০,০০০ টাকা।
– বাংলাদেশের ঢাকা থেকে আমেরিকার ফ্রান্সিসকো শহরের বিমান ভাড়া ২১৬,০০০ টাকা থেকে ২৪০,০০০ টাকা।
– এছাড়াও লস অ্যাঞ্জেলেসের বিমান ভাড়া ঢাকা থেকে ১৬২,০০০ টাকা থেকে ২২৮,০০০ টাকা।
– একইভাবে ঢাকা থেকে আমেরিকার হিউস্টনের বিমান ভাড়া ২০৪,০০০ টাকা থেকে ২২৮,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তবে এই বিমান ভাড়া সব সময় একই হয় না। মৌসুম, বিভিন্ন অফার, বিমানের ক্যাটাগরি ইত্যাদি ভেদে বিমানের ভাড়া ওপরে উল্লেখিত মূল্যের সাথে কিছুটা কমবেশি হতে পারে।
আমাদের সর্বশেষ কিছু কথা:
বর্তমানে সরকারিভাবে আমেরিকার ভিসা কম পাওয়া যায়। তাই অনেকেই বেসরকারি এজেন্সি বা দালালের শরণাপন্ন হন। এতে অনেক অসাধু মানুষ প্রতারণা করার চেষ্টা করে। তাই বেসরকারি এজেন্সি বা দালালের মাধ্যমে ভিসা তৈরির ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশে অবস্থিত আমেরিকার ভিসা অফিস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সহায়তা নিতে পারেন।
সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞাসিত প্রশ্নসমূহ:
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার দূরত্ব কত?
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার দূরত্ব ১৩,২১৯ কিলোমিটার। এবং মাইল হিসেবে ৮,২১৮.৬৯ মাইল ও মিটার পরিমাপে ১৩,২১৯,০০০ মিটার।
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত সময় লাগে?
বিমানের সাহায্যে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে ২০ থেকে ২৫ ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সরাসরি বিমান সুবিধা না থাকায় ট্রানজিট নিতে হয়, এতে ২১ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
এছাড়া সমুদ্রপথে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যাওয়ার জন্য ৩০ থেকে ৪০ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।