Home » কানাডা যাওয়ার যোগ্যতা, ভিসা ক্যাটাগরি ও সহজে যাওয়ার উপায়
কানাডা যাওয়ার যোগ্যতা ও ভিসা বাতিলের কারণ

কানাডা যাওয়ার যোগ্যতা, ভিসা ক্যাটাগরি ও সহজে যাওয়ার উপায়

কানাডা, বিশ্বব্যাপী লাখো মানুষের স্বপ্নের গন্তব্য। প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৩ লাখেরও বেশি মানুষ কানাডার ভিসার জন্য আবেদন করেন। বিশেষত উচ্চশিক্ষা, উন্নত জীবনযাত্রা এবং কাজের সুযোগের কারণে। তবে কানাডা যাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা এবং নথি থাকা আবশ্যক।

আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে কানাডা যেতে চান, আপনাকে অবশ্যই কানাডা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। তবেই আপনি কানাডা প্রবেশের জন্য অনুমতি পাবেন। একেই মূলত কানাডা যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা বলা হয়ে থাকে।

ভিসার ধরন অনুযায়ী এই যোগ্যতার মানদণ্ড আলাদা হয়। আপনি কোন উদ্দেশ্যে কানাডা যাবেন, তার ওপর ভিত্তি করে আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নির্ধারিত ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।

যেমন, স্টুডেন্ট ভিসার জন্য IELTS স্কোর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তির অফার লেটার লাগে। একইভাবে, কাজের ভিসার জন্য কাজের নিয়োগপত্রসহ আরও অনেক ধরনের ডকুমেন্টসের প্রয়োজন হয়।

নিচে কানাডা ভিসা ক্যাটাগরি, ক্যাটাগরিভেদে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও ভিসা বাতিলের কারণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

কানাডা ভিসা ক্যাটাগরি:

কানাডায় যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসা প্রচলিত আছে। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং বিদেশি নাগরিকদের উদ্দেশ্য অনুসারে কানাডা সরকার ভিসার বিভিন্ন ক্যাটাগরি নির্ধারণ করেছে।

তবে বাংলাদেশ থেকে মূলত ৩ ধরনের ভিসার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। এগুলো হচ্ছে স্টুডেন্ট ভিসা, পর্যটন ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট ভিসা। তবে যাদের আত্মীয়-স্বজন আগে থেকেই কানাডায় অবস্থানরত আছেন, তাদের মধ্যে স্পন্সর বা ফ্যামিলি ভিসা নেওয়ার প্রবণতাই সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া কৃষি ভিসা ও বিশেষ ধরনের ব্যবসায়িক ভিসাও কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

টুরিস্ট ভিসা:

টুরিস্ট ভিসা কানাডায় পর্যটকদের জন্য বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি এমন ব্যক্তিরা পেতে পারেন যারা শুধুমাত্র বেড়ানোর উদ্দেশ্যে কানাডায় আসতে চান। এই ভিসা ৬ মাসের জন্য দেওয়া হয়। তবে প্রয়োজনে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

স্টুডেন্ট ভিসা:

যারা কানাডায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চান, তাদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা অত্যাবশ্যক। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গ্লোবাল র‍্যাঙ্কিংয়ে উচ্চ স্থানে অবস্থান করে। এই ভিসা পেতে আপনাকে একটি কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবেদনকারীর জন্য অফার লেটার প্রয়োজন। কানাডার কোনো স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার ভিত্তিতে এই ভিসা প্রদান করা হয়।

ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বা কাজের ভিসা:

কর্ম ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সেই সকল বিদেশি নাগরিকদের জন্য যারা কানাডায় কাজ করতে চান। এই ভিসা পেতে আপনাকে প্রথমে কানাডায় একটি চাকরি খুঁজে বের করতে হবে এবং নিয়োগকর্তার কাছ থেকে চাকরি পাওয়ার প্রমাণ থাকতে হবে।

স্থায়ী বসবাসের ভিসা:

স্থায়ী বসবাসের ভিসা, বা পিআর (পার্মানেন্ট রেসিডেন্স) কার্ড, সেই সকল ব্যক্তির জন্য যারা কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান। এই ভিসার জন্য আপনার স্কিল, শিক্ষা, এবং কাজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আবেদন করতে হবে। এটি অর্জনের জন্য যোগ্যতা ও পয়েন্টভিত্তিক একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়।

ফ্যামিলি ক্লাস স্পন্সরশিপ ভিসা:

এই ভিসা ক্যাটাগরি ব্যবহার করে কানাডীয় নাগরিকরা তাদের পরিবারের সদস্যদের, যেমন স্ত্রী বা স্বামী, সন্তান, বা অন্যান্য নিকটাত্মীয়দের কানাডায় নিয়ে আসতে পারেন। এই ভিসাকে অনেকে কানাডার ফ্যামিলি ভিসা নামে অভিহিত করেন। এটি কানাডার সবচেয়ে সহজ ভিসাগুলোর একটি।

কানাডিয়ান ইনভেস্টর ইমিগ্রেশন ভিসা:

এটি একটি বিশেষ ধরনের ভিসা, যা ব্যবসায়িক উদ্যোগ বা বিনিয়োগের মাধ্যমে কানাডায় বসবাসের সুযোগ প্রদান করে। এই ভিসাকে কানাডা বিনিয়োগ ভিসা বা উদ্যোক্তা ভিসাও বলা হয়। যারা কানাডায় বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য এই ক্যাটাগরি।

এই ক্যাটাগরির ভিসার জন্য প্রমাণিত আর্থিক বিনিয়োগ সক্ষমতা এবং একটি সফল ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রয়োজন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং উচ্চ-আয়ের বেশির ভাগ দেশের নাগরিকদের কানাডায় যাওয়ার জন্য ভিসার প্রয়োজন হয় না। আবার অনেক দেশের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা এবং ই-ভিসা চালু আছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের কানাডা যাওয়ার জন্য এসব সুযোগ নেই। তাই ভ্রমণের পূর্বেই ভিসার জন্য আবেদন করে ভিসা নিয়ে কানাডায় প্রবেশ করতে হবে।

কানাডা যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সমূহ:

কানাডায় যাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হয়। ভিসার প্রকারভেদে এই যোগ্যতাগুলি যদিও পরিবর্তিত হতে পারে, তবে কিছু বিশেষ যোগ্যতার প্রমাণ আপনাকে সব ধরনের ভিসার জন্যই দিতে হবে। যেমন:

  • বৈধ পাসপোর্ট: ন্যূনতম ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট: আবেদনকারীর কোনো অপরাধমূলক কার্যকলাপ নেই তা প্রমাণ করতে হবে।
  •  ব্যাংক স্টেটমেন্ট: পর্যাপ্ত আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ হিসেবে ব্যাংকের বিবরণ জমা দিতে হবে।
  • করোনা টিকা কার্ড: কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সর্বশেষ নির্দেশিকা অনুসারে টিকা গ্রহণের প্রমাণ প্রয়োজন।
  •  জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম সনদের কপি।
  • কানাডা ভিসা আবেদন ফর্ম।
  • আপনাকে প্রমাণ করতে হবে আপনি ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই কানাডা ত্যাগ করবেন।
  • কানাডাতে অবস্থানকালে আপনি কানাডার ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম, সেই জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাংক ব্যালেন্স আপনার আছে তার প্রমাণ।
  • আপনি কানাডাতে গিয়ে কোনো অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়বেন না, এই মর্মে আপনাকে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।
  • আপনার একটি মেডিকেল রিপোর্টের প্রয়োজন হতে পারে।

কানাডায় যাওয়ার আবশ্যিক ডকুমেন্টসসমূহ:

  • বৈধ পাসপোর্ট
  • ভিসা আবেদন ফর্ম
  • আর্থিক সহায়তা প্রমাণ (ব্যাংক স্টেটমেন্ট)
  • ছবি (পাসপোর্ট সাইজ)
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
  • স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ভ্যাকসিনেশন সনদ
  • ইংরেজি ভাষার দক্ষতা (IELTS বা সমমানের পরীক্ষার স্কোর)
  • আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন
  • ১৮ বছরের ওপরের সকলের ন্যাশনাল আইডি কার্ড
  • বিবাহিতদের জন্য ম্যারেজ সার্টিফিকেট (স্ত্রী সাথে ভ্রমণ করলে)

স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডা যাওয়ার যোগ্যতা সমূহ:

কানাডায় পড়াশোনা করতে গেলে কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা এবং ডকুমেন্ট প্রয়োজন:

  • আপনার কানাডার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে অফার লেটার থাকতে হবে।
  • কানাডার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার জন্য আইইএলটিএস বা সমমানের পরীক্ষায় ভালো স্কোর প্রমাণিত হতে হবে।
  • আগে অধ্যয়নরত প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট এবং মার্কশিট জমা দিতে হবে।
  • কানাডায় পড়াশোনার খরচ চালানোর সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে।
  • অনেক সময় উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ বছরের সকল খরচ ঐ দেশের কোনো ব্যাংক একাউন্টে জমা রাখার প্রয়োজন হতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেদে এই নিয়মের কিছুটা পরিবর্তন থাকতে পারে।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
  • স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ।
  • ন্যূনতম ৬ মাস মেয়াদ সম্পন্ন একটি বৈধ পাসপোর্ট।
  • সাম্প্রতিক সময়ে তোলা কিছু পাসপোর্ট সাইজের ছবি।

পর্যটন বা টুরিস্ট ভিসায় কানাডা যাওয়ার যোগ্যতা সমূহ:

পর্যটন বা টুরিস্ট ভিসায় কানাডা যাওয়ার জন্যও কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হয়। যেমন:

  • পর্যটন পরিকল্পনা ও হোটেল বুকিংয়ের প্রমাণ।
  •  আর্থিক সাপোর্টের প্রমাণ।
  • আনুমানিক ১০ লক্ষ টাকার মতো ব্যাংক ব্যালেন্স থাকতে হবে।
  •  বৈধ পাসপোর্ট এবং ভিসা আবেদন ফর্ম।
  • বিমানের রিটার্ন টিকিট বুকিং।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
  • করোনাভাইরাসের টিকার সনদ (যদি লাগে)।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্টের কপি।
  • জন্ম নিবন্ধন সনদ।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র।
  • পূর্বে কোনো দেশ ভ্রমণ করলে তার ডকুমেন্ট।
  • সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
  • পরিবারের সাথে ভ্রমণ করলে পারিবারিক সম্পর্কের প্রমাণপত্র।

বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসার আবেদনের সাথে এসব যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। তবে আমেরিকা, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরও অনেক উন্নত দেশের নাগরিকদের কানাডাতে প্রবেশের জন্য ভিসার প্রয়োজন হয় না।

যদিও বাংলাদেশ থেকে ভিসার প্রয়োজন হয়, তবে আপনি যদি এসব দেশের দ্বৈত নাগরিক হন, তবে সেই দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে ভিসা ছাড়াই সহজে কানাডাতে ভ্রমণ করতে পারবেন।

ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের ভিসায় কানাডা যাওয়ার যোগ্যতা সমূহ:

কাজের ভিসা পেতে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। সেগুলো হলো:

– কানাডার একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কাজের প্রস্তাব থাকতে হবে।
– স্থানীয় শ্রমবাজারে প্রভাব নেই এমন কাজের জন্য কানাডিয়ান নিয়োগকর্তার থেকে LMIA সাপোর্ট প্রয়োজন।
– বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদনকারীর বয়স কাজভেদে নির্দিষ্ট বয়সসীমার ভিতরে হতে হবে।
– প্রাসঙ্গিক কাজের অভিজ্ঞতার সনদ।
– সুস্থতার প্রমাণস্বরূপ মেডিকেল সার্টিফিকেট।
– কিছু কিছু কাজের জন্য IELTS বা সমমানের পরীক্ষায় ভালো স্কোর থাকতে হবে।
– বৈধ পাসপোর্ট।
– ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
– পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
– জন্ম সনদ ও ভোটার আইডি কার্ড।
– সাম্প্রতিক তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
– আবেদনকারীর সকল ডকুমেন্টস সত্যায়িত করতে হবে।
– ভিসা আবেদন ফর্ম ও আবেদন ফি জমা দেওয়ার রশিদ।

ফ্যামিলি স্পন্সরশিপ ভিসায় কানাডা যাওয়ার যোগ্যতা সমূহ:

ফ্যামিলি স্পন্সরশিপ ভিসায় আপনার পরিবারের সদস্য যদি কানাডায় বসবাস করেন, তবে তাদের মাধ্যমে আপনি কানাডায় যেতে পারবেন। এই ভিসার জন্য প্রয়োজন:

– স্পন্সরের কানাডিয়ান নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার প্রমাণ।
– পরিবারের সাথে সম্পর্কের সঠিক নথি।
– আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ। স্পন্সরকার্তার আর্থিক সামর্থ্য যথাযথভাবে প্রমাণ করতে হবে।
– ভ্রমণকারী ব্যক্তির বৈধ পাসপোর্ট।
– জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মসনদের কপি।
– পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।

যেসব কারণে কানাডার ভিসা রিজেক্ট হয়

প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে গড়ে প্রায় ৩ লক্ষের বেশি কানাডার ভিসার জন্য আবেদন করা হয়। তবে এই ৩ লক্ষ আবেদনের মধ্যে বিপুল সংখ্যক ভিসার আবেদন বাতিল করা হয়।

ভিসা আবেদন বাতিল করার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্যে যেসব কারণে সবচেয়ে বেশি ভিসা রিজেকশন বা বাতিলের সম্মুখীন হতে হয় সেগুলো হচ্ছে:

ডকুমেন্টে ত্রুটি: ভুল বা অসম্পূর্ণ নথি জমা দেওয়া।

ভুয়া তথ্য প্রদান: যদি ভিসা আবেদনকারী ভুল বা মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন, তাহলে তা ভিসা অফিসারদের নজরে আসার সাথে সাথেই ভিসা বাতিল হতে পারে।

অর্থনৈতিক সক্ষমতার অভাব: পর্যটকদের বা শিক্ষার্থীদের যদি অর্থনৈতিক সহায়তার প্রমাণ না থাকে, তবে ভিসা বাতিল হতে পারে।

ডকুমেন্টস স্বল্পতা এবং সত্যায়িত না হয়: অপর্যাপ্ত ডকুমেন্টস ও অস্পষ্ট ভ্রমণের উদ্দেশ্য।

নিরাপত্তা বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা: মেডিকেল রিপোর্টে শতভাগ ফিট না হলে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ও স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল হতে পারে।

পূর্ববর্তী ভিসা সমস্যা: পূর্বে যদি কোনো ভিসা সমস্যা থাকে, তাহলে নতুন আবেদনটি বাতিল হতে পারে।

ভিসা আবেদনের সময়সীমা অতিক্রম করা: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন না করলে ভিসা বাতিল হতে পারে।

ইমিগ্রেশন অফিসারের সন্দেহ: আবেদনকারীর উদ্দেশ্য নিয়ে স্পষ্টতার অভাব মনে হলে ইমিগ্রেশন অফিসার ভিসা আবেদন বাতিল করতে পারেন।

কানাডা যাওয়ার সহজ উপায়:

কানাডা যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ফ্যামিলি স্পন্সরশিপ ভিসা। এই ভিসায় আবেদন করা সবচেয়ে সহজ। এছাড়া আরেকটি সহজ উপায় হচ্ছে স্কিলড কর্মী হিসেবে আবেদন করা বা স্টুডেন্ট ভিসার মাধ্যমে পড়াশোনা করা। এটি নির্ভর করে আপনার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ওপর।

সহজে ফ্যামিলি স্পন্সরশিপ ভিসায় কানাডা যাওয়ার উপায়:

কানাডা যাওয়ার অনেক উপায় রয়েছে। তবে ফ্যামিলি স্পন্সরশিপের মাধ্যমে সবচেয়ে সহজে কানাডায় যাওয়া যায়। তবে ফ্যামিলি স্পন্সর ভিসা পাওয়ার জন্য কানাডায় আপনার কোনো পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয়কে বৈধ অধিবাসী হতে হবে এবং আর্থিক অবস্থাও ভালো হতে হবে। তাহলে তিনি আপনার জন্য ভিসার আবেদন করতে পারবেন। এই ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ।

স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডা যাওয়ার সহজ উপায়:

যাদের কোনো আত্মীয় কানাডাতে নেই, তারা চাইলে স্টুডেন্ট ভিসার মাধ্যমে সহজে কানাডা যেতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে ঐ দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তির অফার লেটার নিতে হবে। আর্থিকভাবে সচ্ছল হলে ভর্তির অফার লেটার পাওয়া খুব একটা কঠিন কাজ নয়। সহজেই কানাডার স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া যায়।

ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় কানাডা যাওয়ার সহজ উপায়:

ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের ভিসায় কানাডা যাওয়া কিছুটা কঠিন কারণ এক্ষেত্রে আপনাকে ঐ দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কাজের নিয়োগপত্রের ব্যবস্থা করতে হবে। অনেকে বিভিন্ন দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগপত্রের ব্যবস্থা করে থাকেন।

তবে লিঙ্কডইন, ইনডিড-এর মতো অনেক আন্তর্জাতিক জব প্ল্যাটফর্মে আপনি ঐ দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য আবেদন করতে পারেন। সেখান থেকে কাজের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হলে ঐ কোম্পানি থেকে ইস্যু করা নিয়োগপত্র নিয়ে আপনি কানাডার ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করে কানাডা যেতে পারবেন।

টুরিস্ট ভিসায় কানাডা যাওয়ার সহজ উপায়:

টুরিস্ট ভিসায় অনেকে কানাডা যাওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। আপনার চিন্তা যদি হয় এই ভিসা নিয়ে আপনি কানাডা যাবেন পরবর্তীতে আর ফেরত আসবেন না, তবে এই ভিসা পাওয়া আপনার জন্য সবচেয়ে কঠিন হবে।

কারণ টুরিস্ট ভিসায় কানাডা যাওয়ার জন্য আপনাকে আর্থিক সচ্ছলতা, ভ্রমণের উদ্দেশ্যসহ আরও অনেক ধরনের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়। এবং পূর্বে ভ্রমণ করা দেশগুলোর প্রমাণ স্বরূপ কিছু কাগজপত্রেরও প্রয়োজন হতে পারে।

আপনার উদ্দেশ্য ভিন্ন হলে ভিসা ইন্টারভিউতে আপনার মিথ্যা তথ্য দিতে হবে। এবং কোনো প্রকার মিথ্যা তথ্যের আলামত পেলে ভিসা ইন্টারভিউ অফিসার আপনার ভিসা প্রত্যাখ্যান (রিজেক্ট) করে দিবে।

তবে চিকিৎসা, পর্যটন ও ব্যবসায়িক কারণে অনেকেই টুরিস্ট ভিসা নিয়ে থাকেন। টুরিস্ট ভিসায় কানাডা যাওয়ার সঠিক কারণ ব্যাখ্যা করতে পারলে কানাডার টুরিস্ট ভিসা পাওয়া কঠিন নয়।

সর্বশেষ কিছু কথা

কানাডা যাওয়া সহজ মনে হলেও, সঠিক যোগ্যতা এবং ডকুমেন্টেশন নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিসার ধরন অনুযায়ী যোগ্যতার মানদণ্ড মেনে চললে স্বপ্নের দেশ কানাডায় পৌঁছানো সম্ভব।

অনেক সময় আইইএলটিএস স্কোর বা কোনো প্রকার কাজের দক্ষতা ছাড়াই কানাডা পাঠানোর চটকদার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এবং এসবের ফাঁদে পড়ে অনেকেই নিজের অর্থ-সম্পদ হারান।

কানাডা যাওয়া একটি বড় সিদ্ধান্ত এবং এর জন্য প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং নিয়ম মেনে চলা ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। প্রয়োজনে যেকোনো তথ্য সহায়তায় কানাডা ভিসা অফিসের হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন।

সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নসমূহ

কানাডা যেতে কত টাকা লাগে?

বাংলাদেশ থেকে কানাডা যেতে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়। তবে এটি ভিসার ধরন এবং অন্যান্য খরচের উপর নির্ভর করে।

কানাডা যেতে সর্বনিম্ন বয়স কত লাগে?

কানাডা যাওয়ার জন্য কোনো নির্ধারিত বয়সসীমা নেই। যেকোনো বয়সের লোক কানাডা যেতে পারে। তবে স্টুডেন্ট ও কাজের ভিসার জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর বয়স হতে হবে।

৪০ বছরের পর কি কানাডায় যাওয়া যায়?

৪০ বছরের পরেও আপনি কানাডায় যেতে পারেন। তবে, বয়স বেশি হওয়ায় কিছু ভিসা ক্যাটাগরিতে আবেদন প্রক্রিয়া কঠিন হতে পারে।

৫০ বছর পর কি কানাডায় যাওয়া যাবে?

৫০ বছরের পরেও কানাডায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে, বয়স বেশি হওয়ায় কিছু ভিসা ক্যাটাগরিতে আবেদন প্রক্রিয়া কঠিন হতে পারে। স্থায়ী বসবাসের জন্য কিছু ক্ষেত্রে এটি চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তবে পারিবারিক স্পনসরশিপের মাধ্যমে সম্ভব।

কানাডা যেতে কি IELTS লাগে?

স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডা যেতে IELTS লাগবে। এবং IELTS স্কোর ৬ অথবা তার উপরের হতে হবে। টুরিস্ট ভিসার জন্য IELTS-এর দরকার নেই। তবে কিছু কিছু কাজের ভিসার জন্য IELTS লাগতে পারে। এটি ভাষার দক্ষতা প্রমাণ করে।

সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায়?

সরকারিভাবে কানাডায় যাওয়ার জন্য দক্ষ কর্মী, স্টুডেন্ট ভিসা অথবা ফ্যামিলি স্পন্সরশিপের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন। প্রয়োজনীয় তথ্য সহায়তার জন্য বাংলাদেশে অবস্থিত কানাডা হাইকমিশনে যোগাযোগ করতে পারেন। ঠিকানা: জাতিসংঘ সড়ক, বারিধারা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top