Home » আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা এবং যেসব ভুলে ভিসা বাতিল হয়
মার্কিন ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা

আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা এবং যেসব ভুলে ভিসা বাতিল হয়

বিশ্ব ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল হলো আমেরিকা। উন্নত অর্থনীতি, কাজের সুযোগ, নিরাপদ আবাসন ও সর্বোচ্চ স্তরের শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে অনেক বাংলাদেশির স্বপ্নের দেশ আমেরিকা।

তবে চাইলেই এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায় না। বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে ভিসার প্রয়োজন হয়। আর মার্কিন ভিসা পাওয়া অতটাও সহজ নয়। পদে পদে দিতে হয় নিজের যোগ্যতার প্রমাণ।

ভিসার ধরনভেদে আমেরিকান ভিসার জন্য বিভিন্ন ধরনের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়। যেমন: ভিজিট ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, পারিবারিক ভিসা, এরকম অনেক ধরনের ভিসা রয়েছে। এবং এক এক ভিসার জন্য এক রকম যোগ্যতা থাকা প্রত্যাশিত।

তবে সর্বোপরি, বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার ভিসা পাওয়ার জন্য আপনাকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হতে হবে। তা না হলে আমেরিকান ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

আমেরিকার ভিসা পেতে যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন হবে:

১. ইংরেজি ভাষা দক্ষতা:

আমেরিকাতে প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের মুখের ভাষা ইংরেজি। তাই ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকা জরুরি।

২. ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম:

আমেরিকাতে যে ভিসার জন্য আবেদন করতে চাচ্ছেন, সেই ভিসার ফর্মটি নির্ভুলভাবে পূরণ করে প্রয়োজনীয় ফি সহ ভিসা আবেদন কেন্দ্রে জমা দিতে হবে।

৩. বৈধ মেয়াদসম্পন্ন পাসপোর্ট:

আপনার অবশ্যই একটি বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে। এবং পাসপোর্টের মেয়াদ সর্বনিম্ন ৬ মাস থাকতে হবে। পাশাপাশি আপনার পাসপোর্ট বইয়ের মধ্যে কিছু ফাঁকা পৃষ্ঠা থাকা বাধ্যতামূলক।

৪. ছবি:

মার্কিন ভিসার জন্য পাসপোর্টের সাথে পাসপোর্ট সাইজের ৪ থেকে ৬ কপি ছবি প্রয়োজন হবে।

৫. মেডিকেল রিপোর্ট:

আমেরিকান ভিসার জন্য আপনার মেডিকেল রিপোর্টের প্রয়োজন হবে। তবে ভিসার ভিন্নতার সাথে সাথে রিপোর্টের ভিন্নতা প্রয়োজন হতে পারে। যেমন: আমেরিকার মেডিকেল ভিসার জন্য আপনার অসুস্থতার প্রমাণস্বরূপ মেডিকেল রিপোর্ট প্রয়োজন। আবার কাজের ভিসার জন্য আপনার সুস্থতার প্রমাণস্বরূপ মেডিকেল রিপোর্ট প্রয়োজন।

৬. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট:

আপনি দেশের একজন সুষ্ঠ নাগরিক। আপনি কোনো অপরাধের সাথে জড়িত নন। এবং আপনার নামে কোনো মামলা চলমান নেই। এসবের প্রমাণস্বরূপ আপনার একটি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হবে।

৭. ব্যাংক স্টেটমেন্ট:

আপনি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। আমেরিকার ব্যয়ভার বহন করা আপনার জন্য কঠিন কিছু নয়। সেখানে গেলে আপনি অবৈধভাবে থেকে যাবেন না তা প্রমাণ করার জন্য আমেরিকান ভিসা আবেদনের সাথে আপনাকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে।

ভিসার ক্যাটাগরি অনুসারে যোগ্যতার প্রমাণ স্বরূপ কিছু কিছু জিনিস বেশি প্রদান করার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন, আমেরিকায় কাজের ভিসার জন্য ওই কোম্পানি কর্তৃক নিয়োগপত্র। আবার, স্টুডেন্ট ভিসায় বিশ্ববিদ্যালয় বা ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তির লেটার ইত্যাদি।

আমেরিকান ভিসার ধরনভেদে যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন হবে, সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।

আমেরিকার স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা

প্রতি বছর শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার উদ্দেশ্যে আমেরিকায় যায়। এর অন্যতম প্রধান কারণ বিশ্বের সব টপ ইউনিভার্সিটিগুলোর বেশিরভাগই আমেরিকায় অবস্থিত। বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় পড়তে যেতে আমেরিকান স্টুডেন্ট ভিসার প্রয়োজন হয়। আমেরিকার স্টুডেন্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতাসমূহ হলো:

  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
  • ইংরেজি ভাষার দক্ষতার সার্টিফিকেট (IELTS অথবা TOEFL)
  •  আমেরিকায় থাকা, খাওয়াদাওয়া, টিউশন ফি এবং অন্যান্য খরচ বহন করার মতো আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  • আমেরিকার ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক ভর্তির অফার লেটার
  • স্কলারশিপের ডকুমেন্টের কপি (যদি থাকে)
  • আপনার আমেরিকা যাওয়ার উদ্দেশ্য শুধুই পড়ালেখা, তার প্রমাণ এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আপনি নিজ দেশে ফিরে যাবেন, সেই প্রতিশ্রুতি। (তবে পড়ালেখা শেষ হলে আমেরিকাতে চাকরি করে বসবাস করার সুযোগ রয়েছে।)
  • চারিত্রিক সনদপত্র
  • পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট
  • মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট
  • জাতীয় পরিচয়পত্র
  • সর্বনিম্ন ৬ মাস মেয়াদসহ একটি বৈধ পাসপোর্ট
  • ইংরেজিতে কথা বলতে পারার দক্ষতা। ভিসা ইন্টারভিউতে আপনাকে কিছু সাধারণ প্রশ্ন করা হবে। সেগুলো সঠিকভাবে ইংরেজিতে জবাব দিতে হবে।

আমেরিকায় টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা

প্রতিটি দেশই তার দেশের পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে চায়। আমেরিকাও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে পূর্বে বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ টুরিস্ট ভিসায় আমেরিকাতে গিয়ে আর ফিরে না আসায় টুরিস্ট ভিসার জন্যও কিছু যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়। সেগুলো হচ্ছে:

  • বৈধ পাসপোর্ট।
  • আপনি ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন, পূর্বেও অনেক দেশে ভ্রমণ করেছেন তার প্রমাণ।
  • ইংরেজিতে কথা বলতে পারার দক্ষতা।
  • আপনার আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণস্বরূপ ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
  • আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে আসবেন তার প্রতিশ্রুতি।
  • মেডিকেল রিপোর্ট।
  • রিটার্ন টিকিট, হোটেল রিজার্ভেশন, আমন্ত্রণপত্র (যদি থাকে)।
  • ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্স।

এছাড়াও আরও কিছু ডকুমেন্ট, যেমন পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট, আমেরিকায় যার কাছে যাবেন তার বিস্তারিত তথ্য, এগুলোও দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সর্বশেষ ভিসা ইন্টারভিউ হবে। সব তথ্য নির্ভুল এবং আপনার উদ্দেশ্য সঠিক হলে আমেরিকার টুরিস্ট ভিসা পেয়ে যাবেন।

আমেরিকায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা

ওয়ার্ক পারমিট ভিসা মানে কাজ করার ভিসা। আমেরিকায় কাজের ভিসায় যাওয়ার জন্য কাজের দক্ষতার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা দক্ষতা এবং অনেক সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণও দিতে হতে পারে। এসবের পাশাপাশি মার্কিন কাজের ভিসার জন্য আরও কিছু যোগ্যতার প্রয়োজন হয়, সেগুলো হচ্ছে:

  • একটি বৈধ পাসপোর্ট
  • নির্ভুলভাবে পূরণকৃত কাজের ভিসার ফর্ম জমা দিতে হবে।
  •  যে কোম্পানিতে চাকরি করতে যাচ্ছেন, সেই কোম্পানির জব অফার লেটার।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র।
  • কাজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র।
  • ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে ও লিখতে পারা, অর্থাৎ ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা।
  • মেডিকেল রিপোর্ট।
  • পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট।
  • সর্বশেষে ভিসা ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণ।

ভিসা ইন্টারভিউতে সঠিক ও সৎ উত্তর দিন। সকল কাগজপত্র সঠিক হলে, তাদের যাচাই করুন। প্রক্রিয়ায় আপনাকে সৎ এবং আপনার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নেই, এই বিষয়ে তারা পরিষ্কার হলেই আপনাকে আমেরিকান ভিসা দেওয়া হবে।

আমেরিকার পারিবারিক ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা

যাদের আত্মীয়-স্বজন বা পরিবারের কেউ আমেরিকার বাসিন্দা, তারা চাইলে তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য পারিবারিক ভিসার আবেদন করতে পারে। এই ক্ষেত্রে যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন হবে তা হলো:

  • ঐ ব্যক্তির সাথে পারিবারিক সম্পর্কের প্রমাণ।
  • আমেরিকার ঐ পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়ের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো, তার প্রমাণ।

এছাড়াও বৈধ পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট ইত্যাদির প্রয়োজন হবে।

আরো পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে

ডিবি লটারির মাধ্যমে আমেরিকার গ্রিন কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা

এই লটারির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা আমেরিকায় স্থায়ী বসবাসের ইচ্ছা থেকে বিনামূল্যে আবেদন করতে পারে। প্রতি বছর অক্টোবর মাসে ডিভি লটারি অনুষ্ঠিত হয়। লটারি জিতলে বিজয়ী ব্যক্তিরা গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারে।

তবে বাংলাদেশি নাগরিকরা আর ডিভি লটারিতে আবেদন করতে পারে না। বাংলাদেশের মতো চীন, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম এসব দেশের নাগরিকরাও ডিভি লটারিতে আবেদন করার সুযোগ পায় না। তবে অনেকে ভাবেন ডিভি লটারি বন্ধ হয়ে গেছে। আসলে বাংলাদেশিরা আবেদন করতে পারে না, তবে এখনো এই লটারি চালু আছে।

আমেরিকার বিনিয়োগ ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা

  • আমেরিকার বিনিয়োগ ভিসা পাওয়ার জন্য প্রথমেই ইবি-৫ এই ভিসায় প্রয়োজনীয় ফি সহ আবেদন করতে হবে।
  • তবে এই ক্যাটাগরিতে আপনাকে ভিসা পেতে হলে সেখানে গিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে।
  • এবং সেই ব্যবসায় আমেরিকানদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
  • এবং কমপক্ষে ৫ লক্ষ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে।
  • যদি এই পরিমাণ অর্থের সাথে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা থাকে তবেই আমেরিকার বিনিয়োগ ভিসা পেতে পারেন।

যেসব ভুলের কারণে আমেরিকার ভিসা রিজেক্ট বা বাতিল করা হয়

  • ভুল তথ্য প্রদান।
  • জাল বা ভুয়া কাগজপত্র প্রদান।
  • অননুমোদিত ডকুমেন্ট জমা দেওয়া।
  • ভিসা ফি সঠিকভাবে জমা না দেওয়া।
  • কোন কাগজ কীভাবে জমা দিতে হয়, সেই বিষয়ে সঠিক ধারণা না থাকা।
  •  ভিসা ইন্টারভিউতে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া।
  • ভিসা ইন্টারভিউয়ের জন্য ভালো প্রস্তুতি না থাকা।

সর্বশেষ কিছু কথা:

আমরা এখানে আমেরিকা যাওয়ার জন্য যেসব যোগ্যতার প্রমাণ দেখতে হবে, তার একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে এসবের পাশাপাশি যদি কাজের উদ্দেশ্যে যান, যেই কাজে দক্ষ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করবেন, আগে দেখতে হবে ঐ কাজের চাহিদা আমেরিকাতে আছে কিনা, পাশাপাশি ঐ কাজে দক্ষ কর্মীর সংকট রয়েছে কিনা।

একইভাবে ভিজিট ভিসাতেও আপনি যদি আপনার ভ্রমণের কারণটি সঠিকভাবে বর্ণনা করতে পারেন, তবে আমেরিকার ভিসা পাওয়া আপনার জন্য সহজ হবে।

সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞাসিত প্রশ্নসমূহ:

আমেরিকা যেতে IELTS স্কোর কত লাগে?

গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে আমেরিকা যেতে সাধারণত সর্বনিম্ন ৬.৫ IELTS স্কোর লাগে। এবং পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে সর্বনিম্ন ৭.০ IELTS স্কোর লাগে। কত IELTS স্কোর লাগবে তা সাধারণত আমেরিকান দূতাবাস নয়, বরং যে দেশের যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান, তাদের নির্ধারিত স্কোর অর্জন করতে হবে।

আমেরিকা যেতে বয়সসীমা কত?

আমেরিকা যাওয়ার জন্য কোনো নির্ধারিত বয়সসীমা নেই। তবে ১৮ বছরের কম হলে অভিভাবকদের সাথে যেতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top