Home » ইতালি ভিসা খরচ, বেতন ও ইতালি যেতে কত টাকা লাগে
italy jawar khoroch o beton

ইতালি ভিসা খরচ, বেতন ও ইতালি যেতে কত টাকা লাগে

পশ্চিম ইউরোপের ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত, নানাবিধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি দেশ ইতালি। দেশটির উন্নত অর্থনৈতিক অবস্থা ও অন্যান্য দেশের তুলনায় উচ্চ বেতনের জন্য ইতালিতে প্রবাসীরা ভিড় জমাচ্ছে।

দেশটির রাজধানী রোম, যা একসাথেই প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যেরও রাজধানী ছিল। এছাড়াও এই প্রাচীন দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সমুদ্র, পাহাড়গুলোর সাথে পিৎজা, পাস্তার মতো খাবারগুলো সর্বদা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে।

আপনার যদি শেনজেন ভিসা থাকে, আপনি খুবই অল্প খরচেই ইতালিতে প্রবেশ করতে পারবেন।

আর বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে যেতে হলে আপনার ভিসার প্রয়োজন হবে। আর ভিসার খরচ ভিসার ধরন, মেয়াদ ও ইতালি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত চার্জের ওপর নির্ভর করে।

তবে ইতালির মুদ্রা ইউরোর বিনিময় হারের সাথেই খরচের পরিমাণ কিছুটা ওঠানামা করতে পারে।

বৈধ পথে সব মিলিয়ে বর্তমানে ইতালি ভিসা খরচ বা ইতালিতে যেতে সর্বনিম্ন ৭ লক্ষ থেকে ৯ লক্ষ টাকার প্রয়োজন হবে। এবং সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।

তবে অপরিচিত এজেন্সি বা দালালদের মাধ্যমে ভিসার জন্য ১৮ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকা চাইতে পারে। সাম্প্রতিক পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘমেয়াদি কোনো ভিসায় ইতালিতে যাওয়ার জন্য আপনার আনুমানিক ৮ লক্ষ থেকে ১৪ লক্ষ টাকার প্রয়োজন হতে পারে।

ইতালি ভিসার ধরণ ও ভিসা খরচ:

ভিসার ধরনের উপর ভিত্তি করে ভিসার খরচ নির্ভর করে। বর্তমানে যেসব ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে যাওয়া যায় সেগুলো হলো:

  • ইতালি স্টুডেন্ট ভিসা: অনুমানিক খরচ সর্বনিম্ন ৫ লক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা।
  • ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা (কর্মজীবীদের জন্য): আনুমানিক খরচ ন্যূনতম ৮ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা। সর্বোচ্চ ১৩-১৪ লক্ষ টাকা।
  • ইতালি কৃষি ভিসা: খরচ ৭ লক্ষ থেকে ৯ লক্ষ টাকা।
  • ইতালি ট্যুরিস্ট ভিসা: ট্যুরিস্ট ভিসা সিজনাল ভিসার অন্তর্ভুক্ত, তাই ন্যূনতম খরচ ৩ লক্ষ থেকে শুরু করে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
  • ইতালি স্পন্সর ভিসা: স্পন্সর ভিসার খরচ আনুমানিক ৮ লক্ষ থেকে ১৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
  • ইতালি কনস্ট্রাকশন ভিসা: এই ভিসার খরচ আনুমানিক ১০ লক্ষ থেকে ১৪ লক্ষ টাকা।

অবস্থানরত সময়ের ভিত্তিতে ইতালি ভিসার প্রকারভেদ:

অবস্থান করা সময়ের ওপর ভিত্তি করে বর্তমানে ইতালিতে যাওয়ার জন্য প্রধানত দুই ধরনের ভিসা প্রচলিত আছে।

১. সিজনাল ভিসা বা (শর্ট টার্ম ভিসা): সিজনাল ভিসার মেয়াদ সর্বোচ্চ ৯ মাস।

২. ন-সিজনাল ভিসা বা (লং টার্ম ভিসা): নন-সিজনাল ভিসার মেয়াদ সর্বোচ্চ ২ বছর। তবে তা পরবর্তীতে মেয়াদ বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে।

ইতালিতে যেতে কত টাকা লাগে :

যেহেতু ইতালিতে বিভিন্ন ধরনের ভিসার সাথে সাথে খরচও আলাদা, তাই ইতালি যেতে কত টাকা লাগবে তা অনেকটাই ভিসার ধরনের ওপর নির্ভর করে।

আর প্লেনের টিকিটের দামও পূর্বের থেকে অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। বিমানের ক্যাটাগরি ও সুবিধার ওপর ভিত্তি করে টিকিটের মূল্য ওঠানামা করে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ইতালির রোম পর্যন্ত যেতে একক যাত্রায় টিকিটের দাম পড়বে কমবেশি ৬৫ হাজার টাকার বেশি। এছাড়া কাতার এয়ারওয়েজ, ইতিহাদ এয়ারওয়েজ, কুয়েত এয়ারওয়েজ ও এমিরেটস নিয়মিত বাংলাদেশ থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছে।

সরকারিভাবে ও দক্ষ কর্মীদের ইতালি প্রেরণের উদ্দেশ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়ে থাকে। তখন ৬ থেকে ৮ লক্ষ টাকা খরচ করেও ইতালি যাওয়া সম্ভব।

তবে দালাল বা কোনো এজেন্সির মাধ্যমে গেলে আপনাকে আনুমানিক ১৫ লক্ষ টাকার ওপরে খরচ করতে হবে। এখন আপনি এত টাকা খরচ করবেন কিনা তা সম্পূর্ণই আপনার সিদ্ধান্ত।

ইতালি স্টুডেন্ট ভিসা খরচ:

উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী ইতালিতে যায়। আপনিও ইতালিতে কোনো স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের জন্য যেতে পারেন। ইতালি স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ ৫ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।

এবং আনুমানিক খরচ ৫ লক্ষ থেকে ৯ লক্ষ টাকা হয়ে থাকে। তবে ইতালির ইউনিভার্সিটিগুলো বিশ্বমানের এবং অনেক স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। এতে আপনি সব মিলিয়ে কম খরচে লাভবান হতে পারেন।

ইতালি টুরিস্ট ভিসা খরচ:

ইতালির টুরিস্ট ভিসা একটি সিজনাল শর্ট-টার্ম ভিসা। এই ভিসায় আপনি সবচেয়ে কম খরচেই ইতালি ভ্রমণ করতে পারবেন। টুরিস্ট ভিসার খরচ অনেকটাই কম। আপনি সর্বনিম্ন ৩ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকায় একটি টুরিস্ট ভিসা পেতে পারেন।

ফ্যামিলি ভিসা:

যাদের কাছের আত্মীয়স্বজন ইতালিতে আছেন, তাদের জন্য। যদি আপনার ইতালীয় কোনো নাগরিকের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক থাকে, তবে আপনি এই ভিসা পাবেন এবং ইতালিতে যেতে পারবেন। তবে আপনাকে অবশ্যই সম্পর্ক প্রমাণের জন্য যথাযথ কাগজপত্র প্রদান করতে হবে।

ইতালি বিনিয়োগ ভিসা খরচ:

ইতালিতে গোল্ডেন ভিসা নাম একটি ভিসা রয়েছে তবে যাদের পর্যাপ্ত অর্থ আছে এই ভিসাটি শুধু তাদের জন্য। যারা ইতালিতে বিনিয়োগ করতে চায় ইতালির সরকার তাদের এই ভিসা দিয়ে থাকে। তবে আপনাকে ৫ লক্ষ থেকে ২ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করতে হতে পারে। বাংলা টাকাতে যা দাঁড়ায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা থেকে ২৬ কোটি টাকা পর্যন্ত

ইতালি আবাসিক বা রেমিট্যান্স ভিসা:

আপনার যদি অনেক টাকা থাকে বা অনেক টাকার পেনশন সুবিধা থাকে, আপনি কোনো কাজকর্ম ছাড়াই এই ভিসা পেতে পারেন এবং ইতালিতে বসবাস করতে পারেন।

এছাড়াও ডিজিটাল নোমাড ভিসাসহ ওয়ার্কিং হলিডে ভিসা, টাইপ সি ও টাইপ ডি-এর মতো কিছু বিশেষ ধরনের মানুষদের সুবিধা দেওয়ার জন্য এই ভিসাগুলো চালু আছে।

বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায়:

বৈধ ও অবৈধ উভয় পথেই বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে যাওয়ার প্রচলন আছে।  বৈধ পথে যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজ সহ নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট জমা দিয়ে ভিসা জন্য আবেদন করতে হবে।  

ভিসা অনুমোদন পেলেই আপনি প্লেনের টিকিট কেটে ইতালি যেতে পারেন।  এছাড়া সরকারি ভাবেও দক্ষ কর্মী হয়ে ইতালিতে যাওয়ার সুযোগ  রয়েছে।  

ইতালি ভিসা আবেদন করতে কি কি লাগে:

ইতালিতে ভিসার অনেক ধরন রয়েছে। ধরন অনুযায়ী কাগজপত্রের ভিন্নতা থাকে। তবে যেসব ডকুমেন্ট অবশ্যই লাগবে তার তালিকা দেওয়া হলো:

– পাসপোর্ট
– জাতীয় পরিচয়পত্র
– ভিসা আবেদনপত্র
– পাসপোর্ট সাইজের ছবি
– ব্যাংক স্টেটমেন্ট (আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ)
– ভ্রমণের উদ্দেশ্য বিষয়ক প্রমাণ
– স্বাস্থ্য বীমা
– কাজের যোগ্যতার প্রমাণ (ওয়ার্ক পারমিট ভিসা)
– পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
– IELTS স্কোর ও শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ (স্টুডেন্ট ভিসা)
– কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সনদপত্র

ইতালিতে বেতন কত:

ইতালিতে বেতন যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে। পরিশ্রমীদের কাজের ক্ষেত্রে বেশি মূল্যায়ন করা হয়। তাই পরিশ্রমী ও দক্ষ হলে বেশি উপার্জন করা সম্ভব।

কাজের ধরনের ওপরও বেতন নির্ভর করে। গড়ে ইতালিতে ৬০ হাজার টাকা থেকে ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করা সম্ভব। ডাক্তার, প্রকৌশলী বা এ ধরনের ‘A’ ক্যাটাগরির চাকরি করলে আরও বেশি উপার্জন করা সম্ভব।

আমাদের দেশ কথা:

অনেকেই অল্প খরচে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালিতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। ইতালি থেকে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। বৈধ পথে যাওয়ার চেষ্টা করুন ও অপরিচিত দালালদের থেকে দূরে থাকুন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন:

ইন্ডিয়া থেকে ইতালি যেতে কত টাকা লাগে?

ইন্ডিয়া বা ভারত থেকে ইতালিতে পৌঁছতে আপনার আনুমানিক সর্বনিম্ন ৬ লক্ষ ভারতীয় রুপি থেকে ১০ লক্ষ রুপি লাগবে। এবং সর্বোচ্চ ১১ লক্ষ ভারতীয় রুপি থেকে ১৫ লক্ষ রুপি পর্যন্ত লাগতে পারে।

দুবাই থেকে ইতালি যেতে কত টাকা লাগে? 

দুবাই থেকে ইতালি যেতে আপনার সর্বনিম্ন ৫ লক্ষ থেকে ৬ লক্ষ টাকা খরচ হবে।  বিভিন্ন কারণে আপনার এই খরচ সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮ লক্ষ পর্যন্ত ও হতে পারে। 

বাংলাদেশ থেকে ইতালি যেতে কত সময় লাগে? 

প্লেনের সাহায্যে বাংলাদেশ থেকে ইতালি গেলে আপনার ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।

ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম:

{ https://visa.vfsglobal.com/bgd/en/ita/apply-visa } এই লিংক আপনার ব্রাউজারে ওপেন করে ভিসার ধরণ নির্বাচন করে সকল তথ্য সঠিক ভাবে পূরণ করে ইতালির  ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।  

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top