Home » যেসব ভুলে ই-পাসপোর্ট পেতে দেরি হয়
যেসব ভুলে ই-পাসপোর্ট পেতে দেরি হয়

যেসব ভুলে ই-পাসপোর্ট পেতে দেরি হয়

ই-পাসপোর্ট আধুনিক ভ্রমণের জন্য একটি অপরিহার্য দলিল। সাধারণত ২১ কার্যদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার কথা, তবে বাস্তবে অনেক সময় মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই এই বিলম্বের জন্য আবেদনকারীর কিছু ভুল দায়ী থাকে। এই লেখায় আমরা সেইসব সাধারণ ভুল নিয়ে আলোচনা করবো, যা ই-পাসপোর্ট পাওয়ার সময় দেরির কারণ হতে পারে।

নামের ক্ষেত্রে ভুল

পাসপোর্ট আবেদনের সময় নামের ভুল অন্যতম প্রধান সমস্যা। অনেকেই ‘গিভেন নেম’ এবং ‘সারনেম’ নিয়ে বিভ্রান্ত হন। পাসপোর্ট ফর্ম পূরণের সময় পুরো নাম সঠিকভাবে বিভক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।

  • যদি নাম তিন বা চারটি শব্দের হয়, তাহলে প্রথম অংশ ‘গিভেন নেম’ এবং শেষের একটি শব্দ ‘সারনেম’ হিসেবে দিতে হবে।
  • অনেকেই দুই শব্দের নামের ক্ষেত্রে প্রথম শব্দ গিভেন নেম ও দ্বিতীয় শব্দ সারনেম হিসেবে উল্লেখ করেন, যা ভুল হতে পারে।
  • ফর্ম পূরণের সময় এনআইডি বা অন্যান্য সরকারি কাগজপত্রের সাথে মিল রেখে নাম লিখতে হবে।

নামের এই ভুলগুলোর কারণে পাসপোর্ট প্রসেসিং আটকে যায় এবং সংশোধনের জন্য নতুন করে আবেদন করতে হয়, যা দেরির অন্যতম কারণ।

এনআইডির সঙ্গে আবেদনপত্রের নাম-ঠিকানায় অমিল

পাসপোর্ট আবেদনের সময় এনআইডির তথ্যের সাথে সামঞ্জস্য থাকা অপরিহার্য। অনেক আবেদনকারীর নামের বানান বা ঠিকানার মধ্যে অমিল থাকে, যা পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

  • এনআইডি ও জন্মনিবন্ধনে থাকা নামের সাথে পাসপোর্ট আবেদনের নাম হুবহু মিলতে হবে।
  • অনেকের এনআইডিতে ইংরেজি বানান ভুল থাকে, যা পাসপোর্টের ডেটাবেসে মিল না খাওয়ায় আবেদন স্থগিত হয়ে যায়।
  • পাসপোর্ট অফিস এনআইডি সার্ভারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় যাচাই করে। যদি নামের কোনো অমিল থাকে, তাহলে আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে।

তাই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার আগে এনআইডির তথ্য সঠিক কিনা তা যাচাই করা উচিত। যদি কোনো ভুল থাকে, তাহলে প্রথমে এনআইডি সংশোধন করা ভালো।

নামের সঙ্গে পদবি যুক্ত

অনেকেই নামের সঙ্গে ব্যক্তিগত পদবি বা উপাধি (যেমন: বিএসসি, এমডি, পিএসসি) যুক্ত করেন। এটি পাসপোর্ট আবেদনে বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে।

  • জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধনে এই পদবিগুলো থাকে না, তাই পাসপোর্ট আবেদনেও এসব উল্লেখ করা উচিত নয়।
  • যদি কেউ পদবি যুক্ত করে আবেদন করে, তাহলে তার পাসপোর্ট প্রক্রিয়াকরণ বিলম্বিত হতে পারে এবং সংশোধনের জন্য নতুন করে আবেদন করতে হতে পারে।
  • অনেক সময় এসব বাড়তি শব্দ সফটওয়্যারে গ্রহণযোগ্য হয় না এবং আবেদন ‘অন হোল্ড’ অবস্থায় চলে যায়।

তাই পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র এনআইডি বা অন্যান্য সরকারি নথিতে থাকা নাম ব্যবহার করাই নিরাপদ।

পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনে বিলম্ব

পুলিশ ভেরিফিকেশন ই-পাসপোর্ট ইস্যুর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই পর্যায়ে দেরি হলে পুরো পাসপোর্ট প্রক্রিয়াই পিছিয়ে যায়।

  • সাধারণত ৭ কার্যদিবসের মধ্যে পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ হওয়ার কথা, তবে বাস্তবে এটি মাসখানেক পর্যন্ত সময় নিতে পারে।
  • কোনো ঠিকানায় সমস্যা থাকলে বা তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ না হলে প্রতিবেদনে দেরি হতে পারে।
  • অনেক সময় তদন্ত কর্মকর্তা আবেদনকারীর স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানায় যাচাই করেন, যা সময়সাপেক্ষ হতে পারে।

যারা দ্রুত পাসপোর্ট পেতে চান, তারা পুলিশ ভেরিফিকেশন সহজ করার জন্য ঠিকানা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করুন এবং সংশ্লিষ্ট থানার সঙ্গে সমন্বয় করুন।

ই-পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব এড়ানোর উপায়

১. নাম সঠিকভাবে লিখুন: এনআইডির সঙ্গে নামের সামঞ্জস্য নিশ্চিত করুন।

2. ঠিকানা যাচাই করুন: এনআইডি ও আবেদনপত্রের ঠিকানা এক রাখুন।

3. পদবি এড়িয়ে চলুন: সরকারি নথিতে না থাকা কোনো উপাধি বা টাইটেল পাসপোর্ট আবেদনে উল্লেখ করবেন না।

4. পুলিশ ভেরিফিকেশন সহজ করুন: থানার সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন এবং দ্রুত প্রতিবেদন নিশ্চিত করুন।

5. আবেদনের সময় যথাযথ কাগজপত্র প্রদান করুন: ভুল তথ্য বা অসম্পূর্ণ নথি দাখিল করলে আবেদন আটকে যেতে পারে।

সঠিক তথ্য দিয়ে আবেদন করলে ই-পাসপোর্ট পাওয়ার সময় অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই আবেদনের সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং নিয়ম মেনে চলুন।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top