রোমানিয়া পূর্ব ইউরোপের একটি দেশ, যা দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। রোমানিয়া তার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং স্থাপত্যের জন্যও প্রসিদ্ধ এবং একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধিশালী দেশ। রোমানিয়া ভিসার দাম কত, তা নির্ভর করে আপনি কোন ভিসার মাধ্যমে যেতে চাচ্ছেন তার উপর।
সরকারি ভাবে রোমানিয়া যেতে প্রায় ৪ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। তবে, আপনি যদি কোনো এজেন্সি বা দালালের মাধ্যমে যান, তাহলে ৭-৮ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। এছাড়া অন্যান্য খরচ এবং ভিসার ধরণের উপর ভিত্তি করে টাকা কম বা বেশি হতে পারে।
রোমানিয়া ভিসার দাম কত
বাংলাদেশ থেকে রোমানিয়া যেতে কত টাকা লাগবে তা অনেকটাই নির্ভর করে আপনি কোন ভিসায় রোমানিয়া যেতে চাচ্ছেন তার ওপর। আর আপনি কোন ভিসার জন্য আবেদন করবেন তা নির্ভর করে আপনি কোন উদ্দেশ্যে রোমানিয়া যেতে চান তার উপর।
প্রতি বছর পড়ালেখা, পর্যটন, উন্নত চিকিৎসা ও কাজের উদ্দেশ্যে প্রচুর মানুষ রোমানিয়াতে গিয়ে থাকেন। এসব উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের ভিসা ক্যাটাগরি রয়েছে।
ভিসা ক্যাটাগরি ভেদে খরচের পরিমাণ ভিন্ন হয়ে থাকে। নিচে স্টুডেন্ট, মেডিকেল ও কাজের ভিসার মতো বিভিন্ন ভিসায় রোমানিয়া যেতে কত টাকা লাগবে, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা:
আপনি যদি রোমানিয়ায় শ্রমিক হিসেবে যেতে চান, তাহলে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিতে হবে। রোমানিয়ায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় সরকারি প্রক্রিয়ায় যেতে চাইলে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হবে এবং বেসরকারিভাবে যেতে চাইলে ৭-৮ লাখ টাকা বা তারও বেশি খরচ হতে পারে। বর্তমানে, রোমানিয়ায় বিভিন্ন খাতে শ্রমিক নিয়োগ চলছে এবং অন্যান্য ইউরোপীয়ান দেশের তুলনায় বেতনও তুলনামূলকভাবে বেশি।
স্টুডেন্ট ভিসা:
আপনি যদি রোমানিয়ায় পড়াশোনা করতে যেতে চান, তাহলে আপনাকে স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে হবে। রোমানিয়ার স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন ফি ১২০ ইউরো, এবং ভিসার দাম প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা। সেখানে এক বছরের পড়াশোনার জন্য খরচ হবে প্রায় ২.৫ লাখ টাকা থেকে ৬ লাখ টাকার মতো।
টুরিস্ট ভিসা:
আপনি যদি রোমানিয়া ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যেতে চান, তাহলে আপনাকে টুরিস্ট ভিসায় যেতে হবে। রোমানিয়া টুরিস্ট ভিসার মেয়াদ সাধারণত ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত হয় এবং মেয়াদের ওপর ভিসার খরচ নির্ভর করে। ৩ মাসের ভিজিট বা টুরিস্ট ভিসার জন্য খরচ প্রায় ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা হতে পারে। আর ৬ মাসের ভিসার জন্য খরচ প্রায় ৫ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকার মধ্যে হতে পারে।
মেডিকেল ভিসা:
আপনি যদি অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য রোমানিয়া যেতে চান, তবে মেডিকেল ভিসার প্রাথমিক খরচ ৪ লাখ টাকা থেকে ৬ লাখ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। তবে এই ভিসা সবার জন্য উন্মুক্ত নয় এবং সহজে পাওয়া যায় না। প্রথমে আপনাকে অসুস্থতার প্রমাণ হিসেবে একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে যে আপনি সত্যি অসুস্থ এবং চিকিৎসার জন্য রোমানিয়া যাচ্ছেন।
ফ্যামিলি ভিসা:
আপনার কোনো পরিবারের সদস্য যদি রোমানিয়ার একজন নাগরিক বা বৈধ দীর্ঘমেয়াদী বাসিন্দা হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি আপনাকে ফ্যামিলি ভিসার মাধ্যমে রোমানিয়ায় নিতে পারেন। রোমানিয়া ফ্যামিলি ভিসার দাম প্রায় ২ লাখ টাকা থেকে ৪ লাখ টাকা হতে পারে।
ড্রাইভিং ভিসা:
রোমানিয়ায় ড্রাইভিংয়ের জন্য আলাদা কোনো ভিসা নেই। আপনি সাধারণ ভিসা নিয়ে রোমানিয়া গেলে সেখানে গাড়ি চালাতে পারবেন। কিন্তু, যদি আপনি বাংলাদেশ থেকে রোমানিয়াতে ড্রাইভিং কাজ করতে চান, তবে আপনাকে কাজের ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যেতে হবে। রোমানিয়ায় ড্রাইভিং ভিসার দাম (যা আসলে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা) ৭-৮ লাখ টাকা অথবা তারও বেশি হতে পারে।
রোমানিয়া যেতে কত টাকা লাগে
রোমানিয়া যেতে কত টাকা লাগে, তা নির্ভর করে আপনি কোন প্রকার ভিসা নিয়ে যেতে চাচ্ছেন এবং কীভাবে যাচ্ছেন তার উপর। কারণ রোমানিয়া যাওয়ার জন্য অনেক প্রকার ভিসা রয়েছে। যে কোনো ভিসা নিয়ে অন্যান্য খরচসহ আপনি যদি সরকারিভাবে যান, তাহলে প্রায় ৪ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
আপনি যদি কোনো বাংলাদেশি এজেন্সি বা দালালের মাধ্যমে যান, তাহলে ৭-৮ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। তবে ভিসার ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করে দাম কম বা বেশি হতে পারে।
রোমানিয়ায় মাসিক বেতন কত টাকা
রোমানিয়ায় মাসিক বেতন কত টাকা, সেটা নির্ভর করে আপনার কাজের উপর। কারণ, একেক কাজের একেক মাসিক বেতন। তবে, রোমানিয়াতে যেকোনো কাজের মাসিক বেতন সাধারণত সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
আপনি যদি কোনো বিষয়ে দক্ষ হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার মাসিক বেতন সর্বনিম্ন ৮০ হাজার টাকা থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। কারণ, রোমানিয়াতে একজন দক্ষ লোকের মূল্য অনেক বেশি।
রোমানিয়া কোন কাজের চাহিদা বেশি
রোমানিয়ায় বর্তমানে কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে উচ্চ বেতনের কাজের চাহিদা রয়েছে। এখানে ৮টি উচ্চ চাহিদা সম্পন্ন কাজ সম্পর্কে ধারণা দেয়া হলো:
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার: বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষায় দক্ষতা থাকলে এই ক্ষেত্রে ভালো চাকরির সুযোগ রয়েছে।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ার: সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি ও অভিজ্ঞতা থাকলে এই ক্ষেত্রে চাহিদা রয়েছে।
কন্সট্রাকশন ওয়ার্কার: বিভিন্ন নির্মাণ কাজ যেমন ইটের কাজ, কাঠের কাজ, প্লাম্বিং ইত্যাদিতে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে।
ট্রাক ড্রাইভার: রোমানিয়া ও ইউরোপ জুড়ে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রাক ড্রাইভারদের চাহিদা রয়েছে।
ডেলিভারি ম্যান: শহরের মধ্যে প্যাকেজ, পণ্য, ও খাবার ডেলিভারির জন্য ডেলিভারি ম্যানদের চাহিদা রয়েছে।
ওয়েটার/ওয়েট্রেস: বড় বড় রেস্টুরেন্ট হোটেলে গ্রাহকদের খাবার ও পানীয় পরিবেশনের জন্য ওয়েটার/ওয়েট্রেসদের চাহিদা রয়েছে।
ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার: বিভিন্ন শিল্পের উৎপাদন কারখানায় কাজ করার জন্য ফ্যাক্টরি ওয়ার্কারদের চাহিদা রয়েছে।
কৃষি শ্রমিক: খামার ও কৃষি ব্যবসায় কাজ করার জন্য কৃষি শ্রমিকদের চাহিদা রয়েছে।
এই কাজগুলোর চাহিদা রোমানিয়ায় অনেক বেশি এবং উচ্চ বেতনও দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন
- বাংলাদেশ থেকে কানাডা ভিসার খরচ
- আমেরিকা ভিসার যোগ্যতা
- বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে
- বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যেতে যত টাকা লাগে ও অন্যান্য খরচ
সর্বশেষ কিছু কথা:
আমরা আশা করি রোমানিয়া ভিসা সম্পর্কিত তথ্য আপনাদের জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি আপনি রোমানিয়া ভিসা প্রক্রিয়া নিয়ে আরও জানতে চান, তাহলে আপনি সরাসরি রোমানিয়া দূতাবাস বা কোনো বিশ্বস্ত এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আশা করি আপনার রোমানিয়া যাওয়ার যাত্রা সফল হবে।
সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন সমূহ:
রোমানিয়ার টাকা বাংলাদেশের কত টাকা?
বর্তমানে রোমানিয়ার ১ টাকা অর্থাৎ ১ রোমানিয়ান লিউ সমান ২৪ থেকে ২৬ বাংলাদেশী টাকার মতো হয়ে থাকে। তবে, মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের অবস্থার ওপর নির্ভর করে ওঠানামা করতে পারে। রোমানিয়ার মুদ্রার নাম রোমানিয়ান লিউ (RON)।
রোমানিয়াতে যেতে কত বয়স লাগে?
রোমানিয়া যাওয়ার জন্য সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই। তবে টুরিস্ট ভিসায় ভ্রমণকারীর বয়স ১৮ বছরের কম হলে অভিভাবকের সাথে ভ্রমণ করতে হবে। তবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য কাজ করার ন্যূনতম বয়স হতে হবে। সাধারণত ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে এ ভিসা পাওয়া যায়। আপনি যদি পড়াশোনার জন্য যেতে চান, তাহলে ১৮ বছর থেকে ২৫ বছর বয়স সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক।
রোমানিয়া সিটিজেনশিপ পাবো কি ভাবে?
রোমানিয়ায় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য কিছু নিয়ম আছে। সাধারণভাবে, আপনি যদি রোমানিয়াতে ৫ বছর বৈধভাবে বসবাস করেন এবং স্থানীয় ভাষা শিখে থাকেন, তবে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। রোমানিয়াতে সিটিজেনশিপ পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ করতে হবে:
- পাঁচ বছরের বৈধ বসবাস
- রোমানিয়ান ভাষায় দক্ষতা
- রোমানিয়ান সংস্কৃতি ও ইতিহাসের বিষয়ে জ্ঞান
আপনি যদি কোনো রোমানিয়ান নাগরিকের সাথে বিয়ে করেন, তবে আরও দ্রুত নাগরিকত্বের সুযোগ পাওয়া যেতে পারে।
রোমানিয়া মেয়েদের বিয়ে করা যায় কিনা?
রোমানিয়াতে বিয়ে করা সম্ভব, এবং এই প্রক্রিয়া বেশ সোজা। তবে, আপনি যদি কোনো রোমানিয়ান মেয়েকে বিয়ে করতে চান, তবে আপনাকে কিছু আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
বিয়ের বয়স: রোমানিয়াতে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর।
বিয়ের রেজিস্ট্রেশন: বিয়ের আগে স্থানীয় রেজিস্ট্রেশন অফিসে আপনার সম্পর্ক নিবন্ধন করতে হবে।
আইনি কাগজপত্র: বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজপত্র (পাসপোর্ট, জন্ম সার্টিফিকেট ইত্যাদি) উপস্থাপন করতে হবে।
রোমানিয়া থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশে যাওয়া যায় কি না?
রোমানিয়া, যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) সদস্য দেশ, তবে সম্প্রতি এটি শেনজেন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর মানে হলো, রোমানিয়া থেকে ইউরোপের অন্যান্য যেকোনো দেশে প্রবেশ করা যাবে। তাই রোমানিয়ার বৈধ অধিবাসীরা ও রোমানিয়ান নাগরিকরা সহজেই ইউরোপের অন্যান্য দেশে ভ্রমণ করতে পারে।